মাঠ প্রশাসনকে আরো গতিশীল করতে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে ফিটলিস্ট করা হবে। গত সাড়ে ১৫ বছরে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের চাকরির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি, বিভাগীয় বা দুদকের মামলা বা অভিযোগ নেই, তাদের গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া বঞ্চনা নিয়ে যারা অবসরে গেছেন বা চাকরিচ্যুত হয়ে রিভিউ কমিটির কাছে আবেদন করেছেন, তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী ভূতাপেক্ষ পদমর্যাদা ফেরত ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এমনকি প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি পাবেন প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে থাকা অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
জনপ্রশাসনসচিব বলেন, সরকারি চাকরিতে অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ পদ খালি। পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে পাঁচ হাজার ৪৩৯ জন।
এ ছাড়া সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব এবং উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে শিগগিরই পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এসব পদ পূরণে ক্যাডার পদে ৪৩তম বিসিএসে দুই হাজার ৬৪ জন, ৪৪তম বিসিএসে এক হাজার ৭১০ জন, ৪৫তম বিসিএসে দুই হাজার ৩০৯ জন, ৪৬তম বিসিএসে তিন হাজার ১৪০ জন এবং ৪৭তম বিসিএসে তিন হাজার ৪৮৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া নন-ক্যাডার পদে ৪৩তম বিসিএস থেকে ৬৪২ জন, ৪৪তম বিসিএসের এক হাজার ৭৯১ জন, ৪৫তম বিসিএসের এক হাজার ৫৭০ জন, ৪৬তম বিসিএসের এক হাজার ১১১ জন, ৪৭তম বিসিএসের ৩২৫ জনসহ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
৪৩তম বিসিএসে দুই হাজার ৬৪ জনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, আগামী ১ জানুয়ারি যোগদানের জন্য নির্ধারিত আছে।
গেজেট প্রকাশের পর এই নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হওয়ায় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নিয়োগের স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলমান রয়েছে।
৫ আগস্টের আগে বিসিএস ৪৪তমর মৌখিক পরীক্ষা চলমান ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল।
সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে আগের নেওয়া প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীর, অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১২ হাজার ৭৮৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিলেন জানিয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রথম পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে ছিল। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে এই লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মোখলেস উর রহমান বলেন, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল গত ৯ মে প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষায় ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণে এরই মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমসংখ্যক অর্থাৎ ১০ হাজার ৬৩৮ জন যোগ করে সর্বমোট ২১ হাজার ২৭৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে তিন হাজার ৪৮৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করার জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে অধিযাচন পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, ‘সরকার উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেবে। এ ছাড়া বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পর অল্প সময়ের মধ্যে অবসরে যাবেন, তাদের গ্রেড-১ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের জন্য নতুন করে ফিটলিস্ট করা হচ্ছে। বিসিএস নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন মন্ত্রিপরিষদসচিব যোগদান করেছেন। এসএসবি ফরমেশন হয়েছে। উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দ্রুত সময়ে শুরু হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অনেক বিতর্ক অনেক দিন হয়েছে, নতুন ডিসি ফিটলিস্ট করার কাজটা এসএসবির মাধ্যমে শিগগির শুরু হবে।’
মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব, পেয়েছেন ১৩ দিনে তিন পদোন্নতি। এটা বিষয় না। তারা সারা বছরই বঞ্চিত ছিলেন। এই বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব হয়ে চাকরির শেষ প্রান্তে, সিদ্ধান্ত হয়েছে গ্রেড-১ দিয়ে তাদের পদোন্নতি দেব। অনেকের এক মাস আছে, ১৫ দিন আছে, ২০ দিন আছে। এই পদোন্নতিতে সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিকভাবে তারা উপকৃত হবেন।
এটার জন্য তারা চাকরি করেন। দাবি করার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সরকারি যারা চাকরি করি, বিধি-বিধানের মাধ্যমে করতে হয়। যদি ডিসিপ্লিনারি মামলা থাকে, ফৌজদারি মামলা থাকে, যদি কারো বিরুদ্ধে মামলা থাকে বা মোকদ্দমা-অভিযোগ-তদন্ত যদি থাকে, এদের বিবেচনায় আনা হবে না। তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে না।’
অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি বিধি মোতাবেক শুরু হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ‘আর নতুন করে দল বেঁধে দাবি করার কিছু নেই। যে বিষয়গুলো চিহ্নিত, সে বিষয়গুলো সরকার বিধি মোতাবেক যার যতটুকু প্রাপ্য সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
বিসিএসে কোটা পদ্ধতি কিভাবে প্রয়োগ হবে—জানতে চাইলে সচিব বলেন, ৭ শতাংশ অন্যান্য এবং ৯৩ শতাংশ মেধা, সেভাবে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে অবসরে গেছেন বা চাকরি হারিয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য একজন সাবেক অর্থ সচিবের নেতৃত্বে রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক যাচাই শেষে অন্তত দেড় হাজার কর্মকর্তার আবেদন আমলে নিয়েছে কমিটি। তাদের মধ্যে যারা যে ক্যাটাগরির উপযুক্ত, সে অনুযায়ী ভূতাপেক্ষ পদমর্যাদাসহ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এমনকি একেকজন কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।