বর্তমান সরকারের কাছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের হাজার হাজার দাবির মধ্যে রাজনীতিকদের বড় প্রত্যাশা, একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আগের তিনটি নির্বাচনের তীক্ত অভিজ্ঞতা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।
একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, একবার দিন শুরুর আগে রাতে ভোট আরেকবার ডামি প্রার্থীর অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ হয় ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের সংসদ নির্বাচন। দলগুলো বারবার নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসলেও দেখেনি সফলতার মুখ।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার কিছু দিন পরে সরে গেছে আউয়াল কমিশন। সার্চ কমিটির ধারাবাহিকতায় দায়িত্ব নিয়েছে নাসিরউদ্দিন কমিশন। এতে কী জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটলো? প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পারবেন তারা। এসব বিষয়ে কী ভাবছেন নেতারা?
বিএনপি’র সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, সীমানা নির্ধারণের বিষয় এবং প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ জরুরি যেসব সংস্কার রয়েছে, সেগুলো করার পরই এই নির্বাচন কমিশন একটি নতুন নির্বাচন দেবে বলে আশা করছি।
জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, গত ৫ আগস্ট, গণঅভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লবের পর গণ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনব এই সিদ্ধান্তের মধ্যে ঘটেনি। ভালো হতো, যদি সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসার পর, সেগুলোর ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কি প্রস্তাব দিচ্ছে, সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে একটা সার্চ কমিটি গঠন করতে পারতেন।
বিএনপি-জামাতের বাইরে অন্য দলগুলোতেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া মন:পুত হয়নি সবার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সংশোধনেরও প্রত্যাশা আছে তাদের।
সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, যে নামগুলো গিয়েছে, সেগুলো ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কারো না কারো প্রস্তাবিত। সেই অর্থে দেখলে কমিশনে পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে।
অন্যদিকে এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, আমাদের এমন একটা আইনের পর্যায়ে আসা উচিত, যেখানে নির্বাচন কমিশন ওই আইনের মাধ্যমে ‘অটোমেটিকলি চোজেন’ হবে এবং সেখানে নির্বাচন সম্পর্কে অভিজ্ঞতার জায়গা থাকতে হবে। গতানুগতিকভাবে, এর আগে, আমলাতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতো এবং এবারও উপায় না পেয়ে একই উপায়ে করতে হয়েছে। আশা করছি, এই কমিশনের মাধ্যমে যতখানি ভালো পাওয়া সম্ভব, আমরা পাবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, কমিশনে একজনও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ নেই। তিনি জোর দিচ্ছেন, আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলের আকাঙ্ক্ষা বোঝার ওপর।
ঢাবি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ প্রশ্ন রেখেছেন যে নির্বাচন কি শুধু আমলাতান্ত্রিক কাজের মধ্যে পড়ে? একজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ রাখা প্রয়োজন বলে জানান তিনি
জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যানের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে পদ্ধতি সংস্কার হবে কমিশনের চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক গোলাম রহমান ভূঁইয়া জানান, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের বাহিরে বিশাল লাইন, তবে ভেতরে গেলে দেখা যায় কোন ভোটার নেই। সেই সাথে, নির্বাচন কমিশন সরকারের হয়ে কাজ করেছে। এ কারণে নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটাও নির্বাচন কমিশনের বড় চ্যালেঞ্জ।
নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সুষ্ঠু ভোট আয়োজন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কমিশন গঠনের পর দলগুলোর এখন অপেক্ষা, কবে ঠিক হবে নির্বাচনের দিনক্ষণ!