সুজন হোসেন রিফাত, রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: কয়দিন আগেও গ্রাম থেকে পাড়ামহল্লা সবখানেই বিচরণ ছিল সৈয়দ আবেদ আলীর। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চষে বেড়িয়েছেন সর্বত্র। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ায় নিজ গ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন আলিসান বাড়ি। কিন্তু হঠাৎ থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসায় ডুপ্লেক্স বাড়িটি এখন তালাবদ্ধ। বিসিএস’সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সম্প্রতি আলোচনায় সে। হঠাৎ কুলি থেকে কোটিপতি হওয়ার গল্পে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও।
বিসিএস’সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে এখন আলোচনায় সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত সৈয়দ আ. রহমানের ছেলে সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তিন ভাই-বোনের মেঝ সে। ছোটবেলায় বাবা মারা যাবার পর কষ্টের সংসারে হাল ধরতে রাজধানী ঢাকায় যান আবেদ আলী। ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়ুয়া আবেদ আলী ঢাকায় গিয়ে প্রথমে কুলি’র কাজ শুরু করেন। বহুরাত ঘুমিয়েছেন রেলস্টেশনেও। খাবার হোটেলের প্লেট ধোয়া, রিক্সা চালানোসহ নানা কাজ করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শেষে পিএসসি’র চেয়ারম্যানের চালক হিসেবে চাকুরী নেন। এতে ভাগ্য খুলে যায় আবেদ আলীর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৈত্রিক ভিটা থেকে খানিকটা দুরে জমি কিনে নির্মাণ করেছেন তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। পাশেই গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আবেদ আলী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ। আছে আমসহ বিভিন্ন গাছের বাগান। নিজের পরিবারের নামে কয়েকশ’ একর জমি কিনেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। স্বপরিবারের আছে কোটি টাকা মূল্যের আলাদা গাড়িও। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি। কর্মীসমর্থকদের জন্য খরচ করছেন লাখ লাখ টাকা। এতো টাকার জোগান কোথা থেকে এলে জনমনে নানা প্রশ্নের থাকলেও আস্তে আস্তে তা পরিস্কার হতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে পড়ালেখা করিয়েছেন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিয়াম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তরের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। ছোট ছেলে ও মেয়ে ঢাকাতে পড়াশুনা করেন। ঢাকাতে বাড়ি ও দামী গাড়ি আছে। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকাতে। মাসে দুই একবার আসেন গ্রামের বাড়িতে। বিসিএস’সহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য জড়িত সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের গ্রামের বাড়ি এখন তালাবদ্ধ।
স্থানীয়দের দাবি, এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। অথচ, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে গাইতেন সততার গল্প। এলাকায় অসহায় মানুষকে পাশে দাঁড়িয়ে দান করতেন নিয়মিত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিলে প্রধান কার্যালয়ের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, পিএসসি’র চেয়ারম্যানের সাবেক ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলীর সম্পত্তির ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করা হবে।