বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত মিজানুর রহমান ওরফে এমডি মিজান অঢেল সম্পদের মালিক বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় ইতিমধ্যে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ।
কমিটি থেকে পদ হারানো মিজানুর রহমানকে এলাকাবাসী দানবীর হিসেবেও চেনেন। শুধু এলাকায় নয়, দলীয় কোনো কর্মসূচি হলে সেখানেও তিনি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন। তার বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়া গ্রামে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমডি মিজান সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করেন। বছরে দুই-তিন বার গ্রামে আসেন। যখন গ্রামে আসেন, তখন তিনি সবাইকে জানান দেন। গ্রামে এলেই গরু জবাই করে গ্রামবাসীকে খাওয়ান। মানুষকে অর্থসহযোগিতা করেন। গ্রামের মসজিদ ও মাদ্রাসায় বড় অঙ্কের অনুদান দিয়েছেন। সেই হিসাবে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে মার্বেল পাথরে নিজের নাম বাঁধিয়ে রেখেছেন। এভাবেই তিনি গ্রামে ‘দানবীর’ হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন।
এদিকে মিজানুরের সম্পদের পরিমাণ সম্পর্কে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামে স্থাবর কোনো সম্পত্তি না থাকলেও একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন। দিনাজপুর শহরে তার শ্বশুরবাড়িতে ও ঢাকায় একাধিক বহুতল ভবন ও মার্কেটের মালিক বলে জানা গেছে। বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তার স্ত্রী লাকী বেগম ও তিন সন্তানের নামে। নাম প্রকাশ না করে একাধিক এলাকাবাসী দাবি করেন, পিএসসির প্রশ্ন ফাঁসে জড়িয়ে পড়েন তারই আত্মীয় বিজি প্রেসের সাবেক কর্মচারী এ টি এম গোলাম মোস্তফার হাত ধরে।
এমডি মিজানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক ছিলেন পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)। তাকে এলাকার সবাই আবু দারোগা নামেই চেনেন। তার ছোট ভাই মশিউর রহমান পুলিশের এসআই সিআইডি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
মিজান ২০২০ সাল থেকে আদিতমারীর বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পেয়ে যান তিনি। এর আগে তিনি কোনো দিন আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। গ্রামের অনেক মানুষ বলেন, তিনি গ্রামে আসেন দামি গাড়িতে চড়ে। তিনি নিজেকে দুইটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবেও পরিচয় দেন। প্রশ্ন ফাঁসের টাকা দিয়েই এলাকায় রীতিমতো ‘দানবীর’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মিজানের বাড়িতে গিয়ে তার সৎ-মা জাহেদা বেগমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি মুখ খুলতেই রাজি হননি।