শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন যে পর্যায়ে চলে গিয়েছে, তা যেকোনো অবস্থায় নিয়ন্ত্রণে আনাই এখন একমাত্র কাজ বলে মনে করছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ আন্দোলনকে এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন, বিশেষ করে সোমবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ ও সরকারের অস্তিত্বের ওপর হুমকি এবং আঘাত- এমনটি মনে করছেন দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকররা।
এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত তাদের। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত এবং এ মুহূর্তেই চলমান আন্দোলনকে যেভাবেই হোক বন্ধ করা-ই একমাত্র কাজ বলে ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করেন।
শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভেতরে অস্ত্রধারীদের দেখা যাচ্ছে, অন্ত্র হাতে নিয়ে তারা রাস্তা অবরোধ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অস্ত্র নিয়ে এভাবে রাস্তায় নামতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে নিয়েছেন। এ কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মঙ্গলবার ছয়জন নিহত এবং অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগে উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন দমন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে সরকার ও দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। ইতোমধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ বেশ কিছুই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়কে ভাঙচুর, প্রতিবন্ধকতা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির মতো ঘটনা প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী সংগঠনকেও মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে শক্ত অবস্থান নিতে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমেছেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে মাঠে অবস্থান নেবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
তবে এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের এ সংক্রান্ত বক্তব্যের পর কেউ কিছু বলতে চান না।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত, তাদের সঙ্গে এ সন্ত্রাসীদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এর আগে দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। আজও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির এজেন্ডা আছে। এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, আমাদের দলের যে শক্তি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সেই শক্তিকে আজ কাজে লাগতে হবে। নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে শক্ত অবস্থান নিয়ে অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের আমরা কোনো ছাড় দেব না। এখন কোটা নিয়ে আন্দোলন আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই। বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল-ছাত্রশিবির এ আন্দোলনকে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে পরিণত করতে চাচ্ছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা আসছে, হুমকি আসছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে।