কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই শিক্ষার্থীসহ আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে তাঁদের মৃত্যু হয়। চারজনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ নিয়ে গত সাত দিনে সহিংসতার ঘটনায় শুধু ঢাকা মেডিক্যাল মর্গ থেকেই ১০১ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। গতকাল মারা যাওয়া শিক্ষার্থীদের একজনের নাম ইমতিয়াজ আহমেদ ডালিম (২০) ও অন্যজন মো. মাইনুদ্দিন (২৫)। তাঁরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহেল রানা (২০) নামের একজন গাড়িচালকের মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া এসব তথ্য দিয়ে বলেন, মারা যাওয়া চারজনই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ইমতিয়াজের পায়ে দুটি এবং মাইনুদ্দিনের পিঠে ও গলায় গুলি লাগে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী মাইনুউদ্দিন গত ২১ জুলাই রায়েরবাগ এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন।
সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিটে তিনি মারা যান। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়।
নিহত মাইনুদ্দিনের মা মাহফুজা বেগম জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। তাঁর ছেলে মাইনুদ্দিন স্ত্রী মায়মুনা আক্তারকে নিয়ে যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ এলাকায় থাকতেন।
নিহত ইমতিয়াজের বাবা নওশের আলী জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায়। রামপুরা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গত ১৯ জুলাই রামপুরা এলাকায় ইমতিয়াজ গুলিবিদ্ধ হন। পরে পথচারীরা হাসপাতালে ভর্তি করে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমতিয়াজ বড় ছিলেন।
বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সোহেল রানা পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। হাসপাতাল থেকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। রামপুরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মানিক সাহা এসব তথ্য দেন।
তিনি বলেন, গত ১৯ তারিখে রামপুরা ডিআইটি রোড এলাকায় সোহেল রানা আহত হন। সেখান থেকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউয়ের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মৃত সোহেল রানার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়। ঢাকায় তিনি রামপুরার মৌলভীটেক এলাকায় থাকতেন।
মো. ইয়াসিন গ্যাসের দোকানে কাজ করত। গত রবিবার শনির আখড়া এলাকার সংঘর্ষে সে গুলিতে আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মুগদা হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার বাড়ি খুলনার রূপসায়। সে রূপসার বাসিন্দা নুর ইসলামের ছেলে।
এর আগে গত ২৫ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৯৭ জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ১৭৫ জন, যাঁদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ।