রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দাখিল করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমনটাই মনে করছেন।
পুলিশের তদন্তে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, ‘পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে তাদের মারাত্মক আহত করে ও সড়ক অবরোধে থাকা উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রদের মধ্য হতে বেশ কিছু ছাত্রবেশী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে।
পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের একপর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। তখন তার সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বিকেল ১৫.০৫ ঘটিকার সময় রংপুর মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু হানিফা বলে, আমাদের সামনে আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে।
এই রকম ভুয়া মিথ্যা তথ্য এখন প্রচার করতেছে। আমরা মানি না এই পুলিশের সাজানো নাটক।
শিক্ষার্থী ফাহিম আলমান বলেন, অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যাপারে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয় তবে আমরা বুঝে নেব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
মনিরা নাসরিন মনি বলেন, সবাই অন্ধ নাকি, ন্যায়বিচার বলে কিছু নাই। মিথ্যার দেশে বসবাস করছি আমরা। মিথ্যা ছাড়া কিছু নাই। কিভাবে বাস্তবকে অবাস্তব বানায় দিল, ছিঃ!
সঞ্জয় কুমার শনজ বলেন, এজাহারে যদি লেখা থাকত, সে নিজে নিজেকে গুলি করে হত্যা করেছে তা-ও অবাক হতাম না। বর্তমানে আইন ও আইনের শাসন বলতে কি কিছু আছে যে আপনারা সত্য আশা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত (১৬ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে রংপুরের খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন।
নিহত আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, পুলিশের প্রাথমিক তথ্য বিবরণীটি তাজহাট থানার এসআই মো. জিল্লুর রহমান দাখিল করন।