কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির আড়াই হাজার নেতাকর্মী। দুষ্কৃতকারীরা প্রথমে থানায় ১৫-২০ মিনিট ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়। তারা থানার মালখানায় অগ্নিসংযোগ করে বের হয়ে যায়। পরে দুই ভাগ হয়ে আজমপুরসহ আশপাশের এলাকায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়। এর একপর্যায় তারা পরিকল্পিতভাবে আবারও থানায় হামলা চালায়।
গত ১৮ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানা ও আশপাশের এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে বর্ণনা করেছেন মামলার বাদী উত্তরা পূর্ব থানার এসআই (নিরস্ত্র) পলাশ চন্দ্র সাহা। মামলায় এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে ৩৭ জনকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ২০০০-২৫০০ জন।
আমভর্তি ট্রাকে পেট্রল দিয়ে আগুন দেন আসামিরা
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই উত্তরা পূর্ব থানার ৬ নম্বর সেক্টরের বিএনএস ফুটওভার ব্রিজের নিচে ডিউটি করার সময় খবর পাই, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে পাকা রাস্তার ওপর এজাহারনামীয় ৩৭ জনসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে আড়াই হাজার বিএনপির নেতাকর্মী রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন ভাঙচুর করছে। দুষ্কৃতকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের ওপর সর্বাত্মক হামলা করে। তারা উত্তরা পূর্ব থানার মূল ভবনের সামনে চলে আসে এবং থানার সামনে রাখা একটি আমভর্তি ট্রাকে পেট্রল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। সে সময় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে থানা প্রাঙ্গণে ভাঙচুর চালায় এবং থানার কলাপসিবল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
থানার ৫০ পুলিশ সদস্য আহত
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, দুষ্কৃতকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে প্রায় ৫০ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে এবং থানা ভবনে থাকা সরকারি অস্ত্র, গুলিসহ অন্যান্য সম্পত্তি রক্ষার্থে বিপুল সংখ্যক টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গ্রেনেড, শটগান ফায়ার করেন।
প্রথম দফায় ১৫-২০ মিনিট ধংসাত্মক কার্যকলাপ
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা এভাবে ১৫-২০ মিনিট থানা প্রাঙ্গণে ধংসাত্মক কার্যকলাপ করে। পুলিশের প্রতিহতের কারণে পিছু হটে যাওয়ার সময় থানার মালখানায় জব্দকৃত আলামতের একটি ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়া মালখানায় রক্ষিত গাড়িগুলোতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে।
বিট পুলিশিং বক্সে আগুন
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, দুষ্কৃতকারীরা আজমপুর মোড়ে অবস্থান করে বিট পুলিশিং বক্সে অগ্নিসংযোগ করে এলাকায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে। একপর্যায়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এয়ারপোর্ট থেকে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে আসার সময় আসামিরা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ করে। পরবর্তী সময়ে বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে সংবাদ দিলে আরও রিজার্ভ ফোর্স এসে উপস্থিত হলে দুষ্কৃতকারীদের কবল থেকে অফিসার ও ফোর্সদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। দুষ্কৃতকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে থানা ভবনসহ হাউজবিল্ডিং মোড় থেকে হলিল্যাব মোড় পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সেক্টরের সব রোডে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়।
দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হামলা
মামলার এজাহারে বলা হয়, এজাহারনামীয় আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে আড়াই হাজার জন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীসহ দুষ্কৃতকারীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আজমপুর মোড় ও রাজলক্ষ্মী মোড়ে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন আশপাশের এলাকার সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে দুষ্কৃতকারীদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তারা পুনরায় উত্তেজিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে পূর্বের ন্যায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে থানায় আক্রমণ করে পুনরায় থানায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালায়।
এভাবে পর্যায়ক্রমে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সব অফিসার ফোর্স নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে এবং থানা ভবনে থাকা সরকারি অস্ত্র, গুলিসহ অন্যান্য সব সম্পত্তি রক্ষার্থে পুলিশ বিপুল সংখ্যক টিয়ার সেল, সাউন্ড গ্রেনেড, গ্যাস গ্রেনেড, শটগান ফায়ার করে দুষ্কৃতকারীদের নিবৃত করে। দুষ্কৃতকারীরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে সরকার ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে বিনষ্ট করার অভিপ্রায়সহ অন্তর্ঘাতী কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিনষ্ট, রাষ্ট্রের সম্পত্তি সমূহে হামলাসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অচল করার হীন প্রয়াসে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (৩)/২৫ (ঘ) ধারার অপরাধসহ কর্তব্যরত পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে বলপ্রয়োগ ও আহত করে ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩৫২/৩৫৩/৩৩২/৩৩৩ ধারার অপরাধ করেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, উত্তরা পূর্ব থানার এসআই মোফাজ্জল হোসেন বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জিল্লুর রহমান বলেন, এ মামলায় আমার তিন আসামি রয়েছেন। তাদের ঘটনার দুইদিন আগে থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। আসামিরা ঘটনার সময় পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কীভাবে তারা থানায় হামলা চালায়? হয়রানি করার জন্য আমার আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।