ঢাকা
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:১৫
logo
প্রকাশিত : জুলাই ৩০, ২০২৪

সাজার চেয়ে খালাস বেশি

মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে গত জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ১৮৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। পাঁচজন আসামি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩১ জন আসামি বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন। এতগুলো মামলায় একটিও মৃত্যুদণ্ড নেই। অন্যদিকে রায়ে ৬৩২ জন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

সাজার চেয়ে খালাস বেশি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন বলছে, ১৮৮টি মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ১৩টি মামলার রায়ে। ১৭৫টি মামলাতেই আসামিরা খালাস পেয়েছেন। খালাস পাওয়া আসামির উচ্চহারের কারণ হিসেবে বিচার প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীর কম উপস্থিতি, রায়ের আগে বোঝাপড়া ও আসামিপক্ষের প্রভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় মামলা চলার কারণে তাঁদের অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না। এতে তাঁরা মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

ইরাকে কাজের নামে প্রতারণা

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকে কাজের আশায় গিয়ে পাচারের শিকার হন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার গারো বাজার গ্রামের বাসিন্দা মো. মাসুদ।

দীর্ঘ ৯ মাস নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরতে সক্ষম হন। দেশে ফিরে ২০১৪ ও ২০২০ সালে মানবপাচার আইনে দুটি মামলা করেন মাসুদ। একটির রায় হলেও আরেকটি এখনো ঝুলে আছে। বাদী মাসুদ মন্তব্য করেন, প্রথম মামলায় ‘সঠিক বিচার না পাওয়ায়’ এবং দ্বিতীয়টি ঝুলে থাকায় মামলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তিনি।

মাসুদ বলেন, ‘২০২০ সালে একটি মামলার রায় হয়েছে।

আরেকটি মামলা এখনো ঝুলে রয়েছে। আসামি গ্রেপ্তার হয়েছিল। এরপর থেকে শুনানি হয়। তারিখ পেছাতে থাকে। এভাবে দুই বছর চলে গেছে। এখন আর আমি যাই না। কারণ, এত সময় ও টাকা খরচ করে গিয়ে যখন শুনানি হয় না তখন খুব খারাপ লাগে। আসামিপক্ষ কারসাজি করে শুনানি পিছিয়ে দেয়।’

মাসুদ জানান, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে ওয়ার্ক পারমিটে ভালো কাজের আশা দিয়ে ইরাকে পাঠানো হয়। কিন্তু ইরাকে যাওয়ার পর কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। উল্টো বন্দি করে রেখে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পাচারের সময় তাঁর কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল। ইরাকে যাওয়ার পর আরো এক লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে।

কাজের নামে দুবাই পাচার

পহেলি আক্তার ২০২২ সালে কাজের আশায় দুবাই গিয়ে বুঝতে পারেন তিনি পাচারের শিকার। দুর্ভোগের পর নানা মানুষের সহযোগিতায় এক বছর পর দেশে ফিরে আসেন পহেলি। দেশে এসে তিনি মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করেন। একটি মামলার রায়ে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। অন্যটি এখনো চলছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে আর মামলা চালানোর আগ্রহ পাচ্ছেন না পহেলি আক্তার।

পহেলি আক্তার বলেন, ‘আমার করা প্রথম মামলায় দুজন আসামি খালাস পেয়েছেন। আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে এই মামলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে আরেকটি মামলা করি, যা এখনো ঝুলে রয়েছে।’

মাসুদ ও পহেলি আক্তারের মতো পাচারের শিকার হওয়া আরো বহু মানুষ বিচারের আশায় প্রহর গুনছেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও আসামিদের খালাসে হতাশায় ভুগছেন অনেকেই।

ঝুলে আছে তিন হাজার ৮৮৬ মামলা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত মে মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় ছিল এক হাজার ২০টি মামলা। আদালতে বিচারাধীন দুই হাজার ৮৬৬টি মামলা। সব মামলা মিলিয়েই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, গত পাঁচ মাসে মানবপাচার আইনে ৪৪০টি মামলা হয়েছে। মে মাস পর্যন্ত ৭৫টি মামলার তদন্ত শেষ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। আর এক হাজার ২০টি মামলার তদন্ত এখনো চলছে।

পাঁচ মাসে ৬৩২ জন খালাস

জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এই মামলায় গত পাঁচ মাসে সারা দেশে ১৫ হাজার ৭২২ জন সন্দেহভাজন মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। পাঁচ মাসে খালাস পেয়েছেন ৬৩২ জন। ৩৬ জন সাজা ভোগ করছেন। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।

সাজার চেয়ে খালাস বেশি হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রপক্ষের দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি রাষ্ট্রের দুর্বলতা। রাষ্ট্রের আইনজীবীরা মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হন না। যাঁরা মামলা তদন্ত করেন তাঁদেরও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই রাষ্ট্রকে আরো সতর্ক হতে হবে।’

তবে সাক্ষীদের ভয়ের কারণেই আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিমত দেন জ্যেষ্ঠ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর। তিনি বলেন, ‘আসামিদের বিপক্ষে নিরপেক্ষ সাক্ষীরা ভয় পেয়ে সাক্ষী দিতে আসেন না। এটাই হলো মূল কারণ। আসামিরা বেশির ভাগই সন্ত্রাসী। একজন আসামির জন্য তিন থেকে চারজন করে সাক্ষী থাকতে হয়। এত সাক্ষীকে নিরাপত্তা দেওয়া খুবই কঠিন। সাক্ষীদের মন থেকে ভয় সরে গেলে খালাসের সংখ্যা কমে যাবে।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram