আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল নাফিজ। মা আর ভাইকে বলে গিয়েছিলো, বিজয় না নিয়ে ফিরবে না। বিজয়ের ঠিক একদিন আগেই প্রাণটা তার চলে যায় মুহুর্মুহু গুলিতে।
গত ৪ আগস্ট, ফার্মগেট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর নাফিজের আহত দেহটা টেনে তোলেন রিক্সা চালক নুরু। বলেন, ‘সেই সময়ে আমার-ই হাত পা কাঁপছিল। আমি তাকে ধরে মাটির নীচ থেকে রিক্সায় উঠালাম। তাড়াহুড়ো করে পাশের আল রাজী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু তারাও রাখে নাই। কেউ ধরতে চায় নাই। শেষ পর্যন্ত, আমার গাড়িসহ আগুনে পুড়ে দিতে চেয়েছিলো। তখন আমি বাধ্য হয়ে আস্তে আস্তে নিয়ে যাই চক্ষু হাসপাতালে। আমি আহত নাফিজের ঠিকানা খুঁজেছি, মনে করেছি বাবা-মাকে ফোন দিবো, কিন্তু পাইনি।’
সেদিনের ওই ছবিটা তুলেছিলেন দৈনিক মানবজমিনের ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। ছবি তুলতে তাকেও পড়তে হয় বাধার মুখে। তিনি বলেন, দেখলাম ছেলেটার হাত-পা ধরে তিন থেকে চারজন পুলিশ তাকে রিক্সায় শুইয়ে দিলো। আমি তখন ছবি তুলছি। ওরা অনেক চেষ্টা করলো আমাকে বাধা দেয়ার জন্য। কিন্তু ছবি আমি তুলে-ই গেলাম। শেষদিকে, ছেলেটাকে যখন বের করছে, তখন দেখলাম তার মাথায় পতাকা রয়েছে এবং রিক্সার পাদানির সাথে ঝুলে আছে।
এদিকে, পরিবার তখনো জানে না, নাফিজ আর নেই। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও পাওয়া যাচ্ছিল না প্রিয়জনকে। শহীদ নাফিজের বাবা বলেন, ‘রাইফেল দিয়ে আমার ছেলেকে আঘাত করেছে, এটাও আমার মনে কষ্ট লাগেনা। কিন্তু কষ্ট লাগে, আমার ছেলেকে গুলি করেছে, আর গুলি পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে; রক্ত আর রক্ত। কাপড়গুলো লাল হয়ে গেছে।’
শেষমেষ মধ্যরাতে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাওয়া যায় নাফিজের ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহটা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল নাফিজ। স্বপ্ন ছিল, সেনা অফিসার হবে। শখ ছিল কয়েন সংগ্রহ করা। ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা বেঁচে আছে সে স্মৃতি নিয়েই। স্বজনেরা চায়, বীরের পরিচয় পাক তাদের নাফিজ।