ছাত্র জনতার আন্দোলনকালে মেট্টোরেলের একটি ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে দেখা যায়, মিরপুর দশ’র ওভারব্রিজ দাউ-দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। পুরো আকাশ কালো হয়ে গিয়েছে, কালো সেই ধোঁয়া পার করে চলে যাচ্ছে মেট্রোরেল।
সরকার পতনের এক সপ্তাহ পার হয়েছে। অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মিরপুর দশ’র ক্ষতস্থানগুলো। এছাড়াও পুড়েছে পুলিশ বক্সও। ছাদহীন কঙ্কালের মতো পড়ে আছে ওভারব্রিজ।
মিরপুর দশ’র ওভারব্রিজ ব্যবহারকারী একজন বলেন, ব্রিজের টিনগুলো অরিজিনাল ছিলো না, প্লাস্টিকের ছিলো। যার কারণে, আগুন লাগার সাথে সাথে এগুলো জ্বলে গিয়েছে।
সেদিনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলো ছাত্র-শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, টিয়ারসেল নিক্ষেপের পর পুলিশ বক্সে আগুন দেয়া হয়।
প্লাস্টিকের তৈরি টিন দিয়ে ওভারব্রিজের ছাদ দেয়া হয়েছিলো। সেখান থেকেই কালো ধোয়ার কুন্ডলী তৈরি হয় বলে জানান প্রতক্ষদর্শীরা। এরিমধ্যে সেই ধোয়ার কালি পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বক্স থেকে মেট্টো স্টেশন দুরে থাকায় সেখানে আগুন পৌছাতে পারেনি। বাহ্যিক আবরনেও মিরপুর-১০ কিংবা কাজীপাড়া স্টেশনে ক্ষতচিহ্ন খুব একটা নেই। তবে বিক্ষুব্ধরা ভাংচুর চালিয়েছে দুই স্টেশনেই। লুটপাট হয়েছে অটোমেশন কম্পিউটারসহ লাইট, ফ্যান।
বুয়েটের সিভিল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘উত্তরার যে ডিপো রয়েছে, সেখান থেকে রিমোটলি আমরা মেট্টোরেল নিয়ন্ত্রণ করি। যেহেতু, সিগনাল ও কমিউনিকেশন সিস্টেমের কোন ক্ষতি হয়নি এবং রেলওয়ে ট্র্যাক ও কোচ-ও ক্ষতি হয়নি, তাই, ট্রেন চলাচলে কোন সমস্যা দেখছি না।’
এই প্রকৌশলী বলছেন, মেট্রো রেল চলাচলে বাধা নেই। স্টেশনের কম্পিউটার ও মেশিন প্রতিস্থাপনসহ সব মিলিয়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে না। এর আগে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়েছিলো।
অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান আরও বলেন, ‘প্রকল্প কিন্তু চলমান আছে। আমাদের হাতে নকশা আছে। আমি মনে করি, এই নকশা দিলে, দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে যেসব যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো তৈরি করে জাপান থেকে আবার বাংলাদেশে আনা সম্ভব। এছাড়াও, কনক্রিটের ফোর্স নেয়ার সক্ষমতা যাচাই-বাচাই করা-ও সম্ভব।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক ফোনে জানান, ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, বিভিন্ন কারণে অফিস বন্ধ থাকায়, আমার কাছে রিপোর্টটি এখন-ও এসে পৌঁছেনি। আশা করছি, দ্রুত রিপোর্টটি পেয়ে যাবো।
মেট্টোরেল যাত্রার পর থেকে ঐ রুটে গণপরিবহন কমেছে। তাই মেট্টো বন্ধে ভোগান্তিও বেড়েছে অনেক। মিরপুরের একজন বাসিন্দা বলেছেন, মিরপুর থেকে গুলিস্তান যেতে দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
একজন শিক্ষার্থী জানান, মেট্রো থাকাতে অনেক সুবিধা হয়েছিলো। তবে, বাস দিয়ে চলাচল করতে বেশ সময় লাগছে।
তবে আশার কথা, নগরবাসীর ভোগান্তি রোধে আগামী শনিবার থেকে চালু হচ্ছে মেট্রোরেল।