অর্থসংকটের ছাপ পড়তে শুরু করেছে উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ। অথচ করোনাকালেও ছিল এই এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৯২ শতাংশের বেশি।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এডিপি বাস্তবায়ন হার কমার জন্য অর্থনৈতিক সংকট একটি বড় কারণ। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলো কাজ না করার জন্যও এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছরই দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে এক ধরনের গা-ছাড়া ভাব দেখা যায়। কিন্তু শেষ দিকে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কারণে বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না।
আইএমইডির প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা; শতাংশের হিসাবে ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা, যা জিওবি তহবিলের ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের এডিপিতে জিওবি খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এছাড়া বিদেশি ঋণের ব্যয়ের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি ঋণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।
এডিপি বাস্তবায়নের এ হার করোনাকালের চেয়েও কম। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই সময়েও এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৯২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৫ দশমিক ১৭ শতাংশ।
একক মাস হিসেবে বিদায়ী জুন মাসেও এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি ছিল আগের পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুনে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর ২০২২-২৩ এর জুনে এই হার ছিল ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে একই মাসে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ২৭ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়িত হয়েছিল ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
দেশের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এগুলোর পৃথক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এডিপি বাস্তবায়নে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাদের বাস্তবায়ন হার ১১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের বাস্তবায়ন হার ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
এছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৪৬টি প্রকল্পের বিপরীতে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তারা ব্যয় করেছে ৪ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে যা ১০৭ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের ৬৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। তারা ব্যয় করেছে ৩০ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। যা শতাংশের হিসেবে ১০১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ২৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ১৫২ কোটি টাকা; শতাংশের হিসেবে ১০১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ৩টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৩৮৬ কোটি টাকা। তারা ব্যয় করেছে ১৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তাদের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এডিপিতে ৮টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ২৪২ কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৯২ কোটি টাকা। তাদের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) একটি প্রকল্পের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৪৪ কোটি টাকা। বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ পিএসসির এডিপি বাস্তবায়ন হার ৪৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়েই এডিপি বাস্তবায়নে শুন্যের ঘরে থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভালো করেছে। মন্ত্রণালয়টির ৭টি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ছিল ১০৩ কোটি টাকা। বিপরীতে তারা ব্যয় করেছে ১০২ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দে ৯৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।