কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় সারা দেশে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গত ১৬ জুলাই থেকে ১৮ আগস্টের মধ্যে মারা যায় তারা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এ কথা জানায়।
এইচআরএসএস বলছে, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর সারা দেশে পাঁচ শতাধিক থানা, ফাঁড়ি ও সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া কমপক্ষে ৮০০ ঘরবাড়ি, যানবাহন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৫৩টি হামলার ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন এবং ১০টি মন্দির, ১৫৭টি বসতবাড়ি, ১৭৭টি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগীদের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোর সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এইচআরএসএস বলছে, সংঘর্ষের ঘটনায় তারা এখন পর্যন্ত ৮১৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে।
এর মধ্যে ৬৩০ জনের নাম জানা গেলেও ১৮৯ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া বিশ্বাসযোগ্য তথ্য যাচাই করে তার ওপর ভিত্তি করে তারা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে যে, গত ৩৩ দিনে এই সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার হবে।
এ সময়ের মধ্যে সারা দেশে মোট আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে অন্তত ২৭০ জন সাংবাদিক।
এর মধ্যে গত ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে শুধু ঢাকা শহরের ৩১টি হাসপাতালে কমপক্ষে ছয় হাজার ৭০৩ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও পিটুনির মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত। ছয় সহস্রাধিক মানুষ তাঁদের এক চোখ বা দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।
এইচআরএসএস জানায়, নিহত ৮১৯ জনের মধ্যে ৪৭০ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ৮৩ জন (১৮ শতাংশ), তরুণ ও যুবক বয়সী ২৪০ জন (৫১ শতাংশ), মধ্যবয়সী ১২৬ জন (২৭ শতাংশ) এবং বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ২১ জন (৪.৫ শতাংশ)।
যাদের বয়স জানা গেছে, তাদের মধ্যে ৬৯ শতাংশের বয়স ৩০-এর কম। এ ছাড়া ১০ জন মেয়ে শিশু ও নারী নিহত হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট সবচেয়ে বেশি ২০৫ জন নিহত হয়। ৬ আগস্ট ৯৯ জন, ৭ আগস্ট ৪২ জন, ৮ আগস্ট আটজন, ৯ আগস্ট ১৪ জন, ১০ আগস্ট ছয়জন, ১৪ আগস্ট দুজন, ১৭ আগস্ট একজন ও ১৮ আগস্ট একজন নিহত হয়। সব মিলে এ সময়ের মধ্যে ৩৭৮ জন নিহত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির উপদেষ্টা ও আইন সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলামসহ আরো অনেকে।