আগের দিনও সিলেটের রাজপথে ছিল তাদের দুর্দণ্ড প্রতাপ। অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে মহড়া দিতেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা লাপাত্তা।
অস্ত্রধারী ক্যাডার ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা আত্মরক্ষার্থে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে। বর্তমানে শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে অবস্থান করছেন। দুঃসময়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। রীতিমত টাকার বস্তার বিনিময়ে দালালরা তাদের নিরাপদে ভারত পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এ দালাল চক্রে রয়েছে গরু ও চিনি চোরাকারবারিরা। সীমান্তের একাধিক সূত্র ও শিলংয়ে অবস্থান করা একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ৪ আগস্ট নগরীর কোর্ট পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেন। দাপটের সঙ্গে তারা দিনভর কোর্ট পয়েন্টের দখল ধরে রাখেন। কিন্তু পরদিন সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ‘লাপাত্তা’ হয়ে যান প্রভাবশালী নেতারা। বাসাবাড়ি ছেড়ে তারা চলে যান আত্মগোপনে। কিন্তু দেশের ভিতর গা-ঢাকা দিয়ে থাকা নিরাপদ মনে না করে তারা পার্শ্ববর্তী ভারতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালান।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ। ওই সময় গুঞ্জন ওঠে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারত পাড়ি জমিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এরপর একে একে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে থাকেন। সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে যারা ভারতের শিলংয়ে অবস্থান করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ও বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়াও ঢাকার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমানে শিলংয়ে অবস্থান করছেন। এর আগে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পৌঁছান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। বর্তমানে তারা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন বলে ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। আনোয়ার ও হাবিব দুজনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ভারতে অবস্থানরত কয়েকজন নেতার পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা রয়েছে। তারা অন্য গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গরু ও চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সীমান্তের দুই পাড়ের চোরাকারবারিরা মূলত নেতাদের ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। সীমান্ত পারাপারের জন্য দুই পাড়ের চোরাকারবারিরা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় গত শুক্রবার রাতে আটক হন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক। এ ছাড়া পাহাড়ি এলাকা দিয়ে শিলং যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে। পান্নাও সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে।