পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে ঘুষের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। এর বাইরে সাভার, গাজীপুর ও কেরানীগঞ্জে জমি ও মার্কেট দখল, চাঁদাবাজি, বেনামে ব্যবসা ও মামলার মধ্যস্থতা করেও আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। পুলিশের গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে সব সময়ই সুবিধাজনক পদে বহাল ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রাজধানীর শান্তিনগরের সান টাওয়ারের আইএসপি প্রতিষ্ঠান অন্তরঙ্গ। এতে বিনিয়োগ আছে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, ইন্সপেক্টর নাজমা আক্তারের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। আসাদুজ্জামান-নাজমা দম্পতির চট্টগ্রামের গাড়ি ব্যবসারও প্রকৃত মালিক হাবিবুর রহমান।
সাভার বাসস্ট্যান্ডের রূপকথা মার্কেট দখলেরও অভিযোগ রয়েছে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। পুলিশের মাধ্যমে দখল নিয়ে ভাড়া তুলছিলেন তিনিই। সাভারের বেদেপল্লিতে চাঁদাবাজির অভিযোগ মিলেছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কবরস্থান করার নামেও জোর করে জমি কিনেছেন হাবিব।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডিসি হেডকোয়ার্টাস থাকাকালে প্রথমবার ১৭৫ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় ৭৫ কোটি ঘুষ নিয়ে জনবল নিয়োগ দিয়েছেন ডিএমপির সাবেক এ কমিশনার। এ ছাড়া বদলি এবং পদন্নোতি বাণিজ্যও করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে হাবিবুর রহমান নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। তিনি কিন্তু এগুলো এককভাবে করেছেন, এমন নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, নামে-বেনামে করেছেন। এই যোগসাজশে অনেকেই রয়েছেন।’
উল্লেখ্য, হাবিবুর রহমান ডিএমপিতে ডিসি হেডকোয়ার্টার্স, এসপি ঢাকা, ডিআইজি ঢাকা, টুরিস্ট পুলিশের প্রধান এবং কমিশনার পদে ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ আগস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে অবসরে পাঠানো হয়। দীর্ঘ তিন বছর ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন হাবিবুর রহমান। এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পেশাগত জীবনে তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং দুইবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকে (পিপিএম) পান হাবিবুর রহমান।