বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদ দ্রুত জব্দ করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক চারটি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা। তারা বলেছে, এই পদক্ষেপটি হবে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রথম ধাপ।
এই সংস্থাগুলো—টিআই-ইউকে, ইউকে অ্যান্টিকরাপশন কোয়ালিশন, ইন্টারন্যাশনাল লইয়ার্স প্রজেক্ট, স্পটলাইট অন করাপশন এবং টিআইবি।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছে যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এই পাঁচটি সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে যৌথভাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। বিশেষ করে, অবৈধ সম্পদের মালিকদের জবাবদিহির আওতায় এনে পাচারকৃত সম্পদ ফেরত আনার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে অর্থ ও সম্পদ পাচার হয়েছে, তারা সবাই আমাদের উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের অংশীদার। এসব দেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই তাদের এখতিয়ারে থাকা সব বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবৈধ সম্পদ জব্দ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।”
স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুজান হোলে বলেন, “পাচারকৃত সম্পদ খুঁজে বের করতে এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে।”
টিআই-ইউকের নীতিবিষয়ক পরিচালক ডানকান হেমজ বলেন, “ব্রিটিশ সরকারের উচিত নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের সহায়তাকারীদের বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ জব্দ করা, যাতে তারা অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ ভোগ করতে না পারেন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমরা জানি, বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অভিজাত ব্যবসায়ীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশে রয়েছে।”
গত ৩০ আগস্ট যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, “বর্তমানে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করা বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সুবিধাভোগীদের বিপুল দুর্নীতি উদঘাটিত হচ্ছে। এসব সুবিধাভোগীদের পাচার করা অর্থ-সম্পদ বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পদ, যা পুনর্গঠনের পাশাপাশি দেশকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে অতিদ্রুত পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন।”
চিঠিতে যুক্তরাজ্য সরকারকে তিনটি বিষয় কার্যকর করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রথমত, বাংলাদেশি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাচারকৃত সম্পদ যুক্তরাজ্যে রয়েছে কিনা এবং তা পুনরুদ্ধারযোগ্য কিনা, তা নির্ধারণের জন্য যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে সক্রিয় হওয়া এবং সেই সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেওয়া।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান।
তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ যেসব দেশে বাংলাদেশের অর্থ পাচার হয়েছে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সম্পদ ফেরত আনার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা।