জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের প্লেনারিতে সর্বসম্মতিক্রমে ৬ জুলাইকে 'বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃক প্রস্তাবিত রেজ্যুলেশনটি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পেরু, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের সমন্বয়ে গঠিত একটি কোর গ্রুপের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়।
জাতিসংঘের ৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র এই রেজ্যুলেশনটি স্পন্সর করেছে এবং কোনো ভোট ছাড়াই শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এটি গৃহীত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ কর্তৃক পেশকৃত প্রথম রেজ্যুলেশন; যা কার্যকর বহুপাক্ষিকতার দ্বারা সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও অভাব দূরীকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতিরই সমার্থক।
নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে খসড়া রেজ্যুলেশনের ওপর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মাঝে আলোচনা পরিচালনা করে এবং রেজ্যুলেশনের খসড়া চূড়ান্ত করে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ‘সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (CIRDAP)’ কর্তৃক এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে টেকসই পল্লী উন্নয়নে সহায়তার স্বীকৃতি স্বরূপ, সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার দিন ০৬ জুলাই ১৯৭৯ বিবেচনায়, প্রতিবছর ০৬ জুলাই ‘বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত রেজ্যুলেশনটি উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য উৎপাদন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং উন্নত জীবিকা নিশ্চিতকরণের মত ক্ষেত্রসমূহসহ বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই পল্লী উন্নয়নের উপর গুরত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ‘বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস’ ঘোষণা ও পালনের মাধ্যমে সমন্বিত, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পল্লী উন্নয়নে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করবে, এবং এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের নিমিত্ত গ্রামীন জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে বিশ্বব্যাপী গৃহীত নানাবিধ উদ্যোগ ও কর্মসূচীকে অনুপ্রাণিত করবে।
রেজ্যুলেশনটি জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, একাডেমিয়া, গ্রামীণ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজ, কৃষক সংগঠন, আদিবাসী ও স্থানীয় জনগণকে গ্রামীণ টেকসই উন্নয়নের নিমিত্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রচারের মাধ্যমে বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস পালন করার আহবান জানায়।
এছাড়াও যথাযথভাবে এই দিবস পালনে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় রেজ্যুলেশনটিতে।