ব্যবসার নামে দৈনিক ১৪ কোটি টাকা লুট করছে ডিম সিন্ডিকেট। ভোক্তাদের পকেট কেটে বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙার জোর দাবি সাধারণ ভোক্তাদের। মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে।
ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি চেষ্টার ফল এখন পর্যন্ত অশ্ব-ডিম্ব। বাজার অস্থির, ভোক্তারা খুবই বেকায়দায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম কিনতে সাধারণ ভোক্তাদের গুণতে হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা।
সাধারণ ক্রেতারা জানান, যা দাম বলে ওই দামেই নিতে হয়। যেহেতু খেতে হবে তাই বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে। ডিমের দামটা ঠিক থাকতে না, ডিমের দাম ওঠানামা করছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা কমপক্ষে ৫ কোটি। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩ কোটি। প্রতিটির উৎপাদন খরচ ১০ টাকা। এ হিসেবে ভোক্তাপর্যায়ে পৌঁছাতে ডিমপ্রতি মূল্যবৃদ্ধি ৪ টাকা।
যদিও উৎপাদকদের এ হিসাবও অতিরঞ্জিত। গত দুই বছরে টাকার মূল্যমান কমেছে ৩৮ শতাংশের মতো। ফিডের কাঁচামালসহ নানা অজুহাতে উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম ছিল ৬ টাকা ৩৩ পয়সা। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয় করলে এখন উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম সাড়ে ৮ টাকার বেশি হওয়া যৌক্তিক নয়। কিন্তু প্রায় দেড় টাকা বাড়িয়ে দেখাচ্ছেন উৎপাদকরা। অতিরিক্ত মুনাফা প্রায় ২০ শতাংশ।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “যারা ডিমের উৎপাদন এবং বাজারজাত করে তারা নিজেদের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা করছেনা, তারা একে অপরকে সহযোগিতা করছে ডিমের দাম বৃদ্ধির জন্য- এটাইকে আমরা সিন্ডিকেট বলছি।”
এ হিসাবে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে সাড়ে ৩ কোটি ডিমে দৈনিক অতিরিক্ত ১৪ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করছে সিন্ডিকেট। বছরে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিন্দুমাত্র সিন্ডিকেটশন বা যৌথভাবে দাম ঠিক করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া বা কমিয়ে দেওয়া এটা আমি দেখি নাই এবং বিশ্বাসও করিনা। উৎপাদক থেকে শুরু করে রিট্রেইলার পর্যন্ত মাঝখানে ৪টা হাতের জায়গায় ২টি বা ২টি গ্রুপ যদি জনসাধারণের কাছে নিতে পারি তাহলে দাম কমানো সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, কিছু অসাধু উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে ডিমের দাম বাড়তি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উৎপাদন পরিচালক খাদেমুজ্জামান বলেন, “বিভিন্ন মেসেজিংয়ের মাধ্যমে এটার ম্যানুপুলেশনটা হয়। সেই জায়গাটায় আমরা আশা করি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অধিকত তদারকি করে তাহলে এটা থাকবেনা।”
খুচরাপর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১১ টাকার বেশি হওয়া অযৌক্তিক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।