আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ১৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ৩৮টি হত্যা মামলা ও সদ্য বিদায়ী আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এত মামলা হওয়ার পরও পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হলেন না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন করছেন ডিবি হারুন এখন কোথায় আছেন। তিনি দেশে আছেন কিংবা জীবিত আছেন কি না এসব প্রশ্ন করছেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, হারুন অর রশীদ এখনও জীবিত এবং দেশে অবস্থান করছেন। সরকার পতনের পর তিনি দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে দেশেই অবস্থান করছেন। সরকার পতনের পর মারধরের শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি হন।
ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি পুলিশের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে হারুনের ছবি দেখা গেছে। তিনি অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি ছিলেন। এরপর ছবিটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। তবে আমাদের নিশ্চিত করা হয়েছে তিনি সিএমএইচে ছিলেন। তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে এখনও পরিষ্কার জানা না গেলেও তিনি ঢাকাতেই আছেন বলে জানতে পেরেছি।
পুলিশের দায়িত্বশীল আরেকটি সূত্র জানায়, সরকার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট হারুন অর রশীদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন দেওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেদিন হারুন জানান, তিনি দেশেই আছেন, বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেননি। ৬ আগস্ট তিনি অফিসেও গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। পরদিন ৭ আগস্ট থেকে পুলিশের এই কর্মকর্তার কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হারুন অর রশীদকে ৮ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে মারধর করা হয়েছিল। পুলিশের কিছু অফিসার সিভিল পোশাকে তাকে মারধর করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুলিশ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে এবং পরে হারুনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার ২৬ জুলাই, ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাদের নির্যাতন করা হয় এবং পরে তাদের দিয়ে জোর করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণাপত্র পড়ানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পর হারুনকে সমালোচনার মুখে ৩১ জুলাই ঢাকা থেকে বদলি করা হয়।
হারুন অর রশীদকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ফাঁস হয়েছে, যার মধ্যে একটি ফোন রেকর্ডে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের দাস, সরকারের নির্দেশেই আমাদের সব করতে হয়।’ এছাড়া একটি রেকর্ডে হারুন বলেন, ‘সমন্বয়কদের ধরার নির্দেশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।’
সরকার পতনের পর হারুনের পালানোর বিষয়ে দুটি সূত্রের মধ্যে একটিতে বলা হয় যে, তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়াল টপকে বের হয়ে রিকশায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান, অন্যটি জানায় যে তিনি বিমানবন্দরে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হন।
সূত্র: ঢাকা পোস্ট