ঢাকা
৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:০৮
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

গ্রাহকদের ৪৫ কোটি টাকার ভ্যাট জমা দেয়নি টেলিটক

টেলিকম সেবার বিনিময়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা প্রায় ৪৫ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি টেলিটক। এতে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও একমাত্র দেশি মালিকানাধীন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটক।

প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর জয়েন্ট স্টক কম্পানিতে ‘টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে নিবন্ধিত হয়। যাত্রা শুরুর পর প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও টেলিটকের এই ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পারে।

এনবিআরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত টেলিটক অপরিশোধিত সারচার্জ, সম্পূরক শুল্ক, বিধিবহির্ভূত রেয়াত, উৎস ভ্যাট ও ভ্যাট বাবদ ৪৪ কোটি ছয় লাখ ৩০ হাজার ১৪৯ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

এর মধ্যে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ২৬ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা এবং ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ টাকা ফাঁকি দিয়েছে।

জানা গেছে, নিরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সেবা মূল্যের বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ, প্রতিষ্ঠানের দাখিলপত্র, ট্রেজারি চালানের কপি ও প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা সেবামূল্যের বিবরণীর দলিল পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেট, প্রি-পেইড, পোস্ট-পেইড, টক টাইম, সিম কার্ড ও অন্যান্য সেবার বিপরীতে এই ফাঁকি দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি আদর্শ করহারের সেবার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে এক কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ৯০২ টাকা।

একই সময়ে আদর্শ করহার ছাড়া সেবা থেকে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ১৩ কোটি তিন লাখ ৯০ হাজার ৫২১ টাকা। উৎস ভ্যাট থেকে ফাঁকির পরিমাণ এক কোটি ৬২ লাখ ১৩ হাজার ৩৫৪ টাকা। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূত রেয়াত গ্রহণের মাধ্যমে এক কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ২০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

আলোচ্য দুই অর্থবছরে টেলিটক ১৭ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই টাকা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২-এর ৭৩ ধারা অনুযায়ী আদায়যোগ্য।

একই সঙ্গে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী ভ্যাট দেওয়ার নির্ধারিত সময় থেকে পরিশোধের দিন পর্যন্ত ভ্যাটের পরিমাণের ওপর সুদ প্রযোজ্য হবে।

এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে টেলিটক অপরিশোধিত সারচার্জ, সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ২৬ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার ৩৫২ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই টাকা আদায়ে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেলিটক ভ্যাট ফাঁকি দিলে অন্য অপারেটররাও ভ্যাট ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হবে। তাই টেলিটকের উচিত সেবার মান ঠিক করে বাজার বড় করা এবং সঠিক সময়ে সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করা। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় করতে না পারায় সরকারকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

ভ্যাট ফাঁকি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেলিটকের পরিচালক ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি (ভ্যাট ফাঁকি) উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমরা একটি টিম করেছি। তারা এটি পর্যালোচনা করবে। টিমের কয়েকটি মিটিং হয়েছে, আরো কয়েকটি হবে। এরপর তা যাচাই করা হবে। যাচাই করার পর বিষয়টি নিয়ে বলতে পারব।’

সরকারি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিলে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি বড় কথা নয়। দেশের নাগরিক হিসেবে সবাইকে সঠিকভাবে কর দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৯ কোটি ৪২ লাখ। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা আট কোটি ৫২ লাখ, রবি আজিয়াটার পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ, বাংলালিংকের চার কোটি ৩৫ লাখ ও রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের মাত্র ৬৫ লাখ।

২০০৫ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালুর পর মানুষের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। সে সময় কম খরচে কথা বলার সুযোগ দেওয়ায় প্রত্যাশা জাগিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে তখন লাইন ধরে মানুষ টেলিটকের সিম কিনেছিল। তবে প্রতিষ্ঠার প্রায় ২০ বছর পর টেলিটক দেশের মোট চারটি অপারেটরের মধ্যে গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব ও নেটওয়ার্কের আওতার দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে। বর্তমানে সরকারি কিছু সেবা নিতে টেলিটকের সিম বাধ্যতামূলক। এ কারণে অনেকে টেলিটক সিম রাখে। তবে নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram