ঢাকা
২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৪:৪০
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪

সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সম্পদের পাহাড়

স্থানীয় জনতার কাছে ‘ফেরাউন’ হিসাবে পরিচিত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ-সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, টানা ১৬ বছর ক্ষমতার দুর্দান্ত প্রভাব খাটিয়ে নামে-বেনামে এবং স্বজনদের নামে তিনি হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, কৃষি, অকৃষি জমি, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, হোটেল, ইন্সুরেন্সসহ বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মুজিবুলের হাতে নির্যাতিত মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপি-জামায়াতের মতো অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও এলাকায় নিজেদের বাড়িঘরে ফিরেছেন। মুজিবুল ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচারে অসংখ্য তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া ছিলেন।

সরেজমিন জানা যায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বশুয়ারা গ্রামের কৃষক রজ্জব আলীর ছেলে মুজিবুল হক। স্থানীয়দের দাবি তিনি নিজেই সভা-সেমিনারে গর্ব করে বলতেন আমি কৃষকের ছেলে। কৃষকের সন্তান এমপি-মন্ত্রী হলে জনগণকে কখনো ঠকায় না। নিজেকে বারবার কৃষকের সন্তান পরিচয় দিলেও প্রতিনিয়ত তিনি জনগণকে ঠকিয়ে নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চৌদ্দগ্রামেও মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষুব্ধ জনতা চৌদ্দগ্রাম বসুয়ারা গ্রামে তার বাড়ি ও কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এর মাধ্যমেই পতন ঘটে অত্যাচারী মুজিবুল হকের অহংকার আর দম্ভের।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, এমপি এবং মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি কুমিল্লা নগরীর কর ভবন এলাকায় নির্মাণ করেছেন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় নির্মাণ করেছেন বাণিজ্যিক ভবন। নগরীতে নিজের বাড়িসংলগ্ন দারুস সাফিদ ও সিলভার ক্রিসেন্ট নামের দুটি ভবনে নিজের এবং ভাতিজার নামে কিনেছেন কয়েকটি ফ্ল্যাট। রাজধানীর ধানমন্ডিতে ৮ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, তিনটি বিলাসবহুল জিপগাড়ি, ঢাকা উদ্যান এলাকায় চারতলা ও আগারগাঁও শাপলা হাউজিংয়ে রয়েছে তিনতলা বাড়ি। কুমিল্লার কোটবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন স্থানে হোটেল ও ফিলিং স্টেশন রয়েছে। চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজারে নির্মাণ করেছেন কাকরি টাওয়ার নামে বাণিজ্যিক ভবন। প্রায়ই তিনি সিঙ্গাপুর ও দুবাই পরিবারসহ বেড়াতে যান। সেখানে তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

চৌদ্দগ্রামের সব ফ্যাক্টরি ইটভাটাসহ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হতো মুজিবুল হকের নামে। তার ভাতিজা তোফায়েল হোসেন চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। মুজিবুলের নির্দেশে তার লোকেরা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালাত। সাজানো হতো একের পর এক মিথ্যা মামলা। তার অত্যাচার, হয়রানি থেকে রেহাই পাননি নিজের দলের নেতাকর্মীরাও। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই শুরু হতো অমানুষিক নির্যাতন। বাড়িঘরে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর চালানো হতো। ৬৭ বছর বয়সে ২০১৪ সালে জেলার চান্দিনায় হনুফা আক্তার রিক্তাকে বিয়ে করেন মুজিবুল হক। এখন তিনি তিন সন্তানের জনক। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকে তিনি বাংলাদেশে ছিলেন না। পরে দেশে ফিরলেও তাকে কুমিল্লায় দেখা যায়নি। মূলত শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করছেন শোনা গেলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদার বলেন, মুজিবুল হক একজন দুর্নীতিবাজ। আমি তার অনিয়ম, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দিয়েছে। তিন বছর আমার ইউনিয়ন পরিষদ তালাবদ্ধ করে রেখেছে। একাধিকবার আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। তার ভাতিজা তোফায়েল আহমেদ, নাতি লোকমান হোসেন রুবেল এবং সন্ত্রাসী মনিরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা, গাড়ি ভাঙচুর এবং পরিষদে ভাঙচুর করা হয়। মুজিবুল হকের ভাতিজার নেতৃত্বে উপজেলার সব ইটভাটা থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। টিআর কাবিখা বরাদ্দের নামে সব অর্থ লুটপাট করা হতো। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অনিয়ম-দুর্নীতি, দখলবাজি, ড্রেজার পরিচালনা, সরকারি সম্পদ দখলসহ সব ধরনের অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত মুজিবুল হক এবং তার পরিবার।

মাদক চোরাচালান এবং অস্ত্র কারবারেও জড়িত মুজিবুল হকের ভাতিজারা। তিনি রেলপথমন্ত্রী থাকাকালীন খালাসি পদে ৮ শতাধিক জনবল নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রূপালী ইন্সুরেন্সে মুজিবুল হকের শেয়ার রয়েছে। দুবাই, সিঙ্গাপুরে তার ব্যবসা ও ফ্ল্যাট রয়েছে। স্ত্রী হনুফা আক্তারের স্বজনদের নামে অনেক সম্পদ গড়েছেন। শত শত কোটি টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। এই দুর্নীতিবাজ কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার রেজা বলেন, মুজিবুল হকের মতাদর্শের বাইরে যাওয়ায় আমাকে চরমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। দফায় দফায় আমার ওপর হামলা করা হয়েছে। আমার বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও আমি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের চেয়েও বেশি নির্যাতিত হয়েছি। তাকে চৌদ্দগ্রামের মানুষ ফেরাউন হিসাবে জানে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেও আমরা বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছি। আমরা মুজিবুল হকের মতো একজন দুর্নীতিবাজের পতন কামনা করছিলাম। আল্লাহপাকের অশেষ মেহেরবাণীতে তার পতন হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক খন্দকার শরিফুল ইসলাম বলেন, চৌদ্দগ্রামের সব উন্নয়নমূলক কাজ থেকে তিনি ৬-১০ শতাংশ কমিশন নিতেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অধিকাংশ ভুয়া প্রকল্প দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। চরম বদমেজাজি মুজিবুল হক মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে মজা পেতেন। ইউপি নির্বাচনে যারা বেশি উৎকচ দিতে পারত, তাদেরই মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করতেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন দুর্নীতিবাজ মুজিবুল।

জেলা যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান খান নয়ন বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বিএনপি-জামায়াতের চেয়েও বেশি নির্যাতিত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে আইসিটি মামলাসহ আরও অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ বলতে কোনো কিছু ছিল না। মুজিবুল হক চৌদ্দগ্রামে তার রাজতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এখানে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধুর কোনো আদর্শ তিনি বাস্তবায়ন হতে দেননি। সর্বোপরি তিনি এখানে মুজিবুল হক লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের চরম নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই এবং তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই শুরু হতো তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন, মামলা-হামলা। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের তিনি সবসময় কোণঠাসা করে রাখতেন। দুর্বল কর্মীদেরই পদ-পদবি দিয়ে তার প্রতি নতজানু করে রাখতেন। আওয়ামী লীগকে এক ধরনের জিম্মি সংগঠনে পরিণত করেছিলেন মুজিবুল। তিনি তার পরিবারের লোকজনকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বানিয়ে প্রতিষ্ঠিত ও পুনর্বাসন করেছেন।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram