স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদ জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও শহিদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে একজন সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের প্রাথমিক একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে। ইতোমধ্যে আমরা ৭০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ১৯ হাজার জন আহতের তালিকা পেয়েছি। তবে এ তালিকা সম্পূর্ণ হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। বুধবার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সিনিয়র সচিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার জন্য ঢাকায় ১৩টি হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তী সময়ে সারা দেশের আহত ছাত্র-জনতার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন যাদের ঢাকায় রেফার করা হয়েছে, তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোর ডেডিকেটেড অংশে স্থানান্তর করা হয়েছে, যেখানে তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসা সম্পর্কিত অভিযোগ, পরামর্শ, তথ্য জানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হটলাইন খোলা হয়েছে। হটলাইনে আসা কলগুলো পর্যালোচনা করে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনেক হাসপাতাল বিনামূল্যে আহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। যারা আহত হয়েছেন বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের টিম আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাদের দেশে চিকিৎসা করতে হাসপাতাল অপারগতা প্রকাশ করেছে, তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে।
স্বাস্থ্য সচিব আরও বলেন, এছাড়া দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংস্কার ও চিকিৎসাসেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য ১২ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এমএ আকমল হোসেন আজাদ আরও জানান, রোববারের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘১২ বছর ধরে যে আইন নিয়ে গবেষণা হয়েছে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে, আমি সেটি ১২ দিনে পারি নাই, তবে ২৪ দিনের মধ্যে পারব। আজকে আমার দায়িত্ব নেওয়ার ২১ দিন, আগামী ৩ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদে যাবে। ২০১২ সালে তৈরি করা স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-২০২৪ এখন পর্যন্ত গবেষণা আকারে আছে। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে কথা দিয়েছি, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেব। রোববারের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে যাবে খসড়া আইন।’ তিনি আরও বলেন, আইনে রদবদল করার এখতিয়ার কেবিনেটের সাব-কমিটির। তারা চাইলে আমাদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারে। আমি যতটুকু বুঝেছি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এতদিন এটি মন্ত্রিপরিষদে যায়নি।
সিনিয়র সচিব বলেন, বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ আক্রান্ত এলাকায় সরকারিভাবে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম, পৌরসভায় তিনটা করে মেডিকেল টিম কাজ করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওষুধসহ মেডিকেল টিম দিয়ে বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জেলা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কলেরা ফ্লুইড ইত্যাদি মজুত রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে শয্যা সক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগীও ভর্তি আছে। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতের জনবলের অপ্রতুলতা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চাপ। ফলে কোনো কোনো জায়গায় চিকিৎসাসেবার ব্যত্যয় ঘটেছে। যেটার সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।