দেশে জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১৮ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে ব্যাংকিং খাতে। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে হামলা ও লুটপাট হওয়ার ভয়ে বন্ধ রাখা হয় রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার এটিএম বুথ।
এতে টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহক। ফলে জুলাই মাসে এটিএম কার্ডে লেনদেন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। শুধু এটিএম কার্ড লেনদেনই নয়, ব্যাপক হারে কমেছে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে এটিএম, পস, সিএআরএম ও ই-কমার্সে ট্রানজেকশনে লেনদেন হয়েছে ৪০ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা, যা তার আগের মাস জুনে ছিল ৫১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন কম হয়েছে ১০ হাজার ৮১২ কোটি টাকা বা ২১ শতাংশ। এ ছাড়া জুলাই মাসে ট্রানজেকশন হয়েছে চার কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজারটি, যেখানে আগের মাসে হয়েছিল পাঁচ কোটি ২৯ লাখ ৫৩ হাজারটি। লেনদেন কমেছে প্রায় ৯৭ লাখ ২৪টি।
প্রতিবেদন বলছে, জুলাই মাসে এটিএম বুথে লেনদেন হয়েছে ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। জুন মাসে লেনদেন হয়েছিল ৩১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। লেনদেন কমেছে সাত হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত জুলাই মাসে বিভিন্ন দোকান, বিপণিবিতানে পস মেশিনের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। তার আগের মাস জুনে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ১৯৯ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে লেনদেন কম হয়েছে প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকা। জুলাই মাসে লেনদেনে ভাটা পড়ে ই-কমার্সেও। কারণ ই-কমার্স খাত পুরোপুরি ইন্টারনেটের ওপর নির্ভশীল। আর ওই মাসে বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকে ইন্টারনেট। ই-কমার্স খাতে লেনদেন হয় এক হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। তার আগের মাসে হয়েছিল এক হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। লেনদেন কম হয়েছে ২৪০ কোটি টাকা। এদিকে জুলাই মাসের আন্দোলন ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ব্যাপক পতন হয়েছে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনেও।
দেশে-বিদেশে সবখানেই কমেছে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৩৪২ কোটি টাকা, যা জুন মাসে ছিল দুই হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডে দেশের অভ্যন্তরে লেনদেন কমেছে ৩৭৩ কোটি টাকা বা ১৪ শতাংশ। এ সময় দেশের অভ্যন্তরে বিদেশিরা খরচ করেছেন ১৩৬ কোটি টাকা, যা জুন মাসে ছিল ১৭৬ কোটি টাকা। খরচ কমেছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
একই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের মাধ্যমে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে খরচ হয়েছে এক হাজার ১৯৬ কোটি, খুচরা দোকানে ৩১৮ কোটি, ইউটিলিটি বাবদ ২০৮ কোটি, নগদ উত্তোলন ১৭১ কোটি, কাপড় কেনায় ৮৯ কোটি, ফার্মেসিতে ১৪০ কোটি, ফান্ড স্থানান্তর ৭৬ কোটি, পরিবহনে ৭০ কোটি, বিজনেস সার্ভিসে ৪২ কোটি, প্রফেশনাল সার্ভিসে ১৮ কোটি এবং সরকারি সেবায় ১০ কোটি টাকা। গত জুন মাসে যার প্রতিটি সূচকে খরচ বেশি ছিল। এ ছাড়া দেশের ভেতরে জুলাইয়ে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে খরচ হয়েছে এক হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে ৪১৫ কোটি, অ্যামেক্সে ২৩১ কোটিসহ বেশ কয়েকটি কার্ডের মাধ্যমে বাকি টাকা ব্যয় হয়েছে।
প্রতি মাসেই ক্রেডিট কাডের মাধ্যমে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন বাংলাদেশিরা। এর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে থাকে ভারত। কিন্তু জুলাই মাসে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। জুলাই মাসজুড়ে বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন, যা জুন মাসে ছিল ৫২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক জুলাইয়েই খরচ কমেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ কোটি টাকা। ভারতে খরচ করেছেন ৭৩ কোটি টাকা। অথচ তার আগের মাসে যুক্তরাষ্ট্রে খরচ ছিল ৭৭ কোটি এবং ভারতে ছিল ৯২ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাইল্যান্ডে ৫০ কোটি এবং যুক্তরাজ্যে ৩৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন।