দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট তৌফিক এলাহী-বিপু সিন্ডিকেটের কালো থাবার কালো গ্রাস থেকে জ্বালানি সেক্টরের কান্ডারী তথা দেশের প্রায় ৬০% গ্যাসের দক্ষ ও নিরাপদ বিতরণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গ্রাহক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি তিতাস গ্যাস তথা জ্বালানি খাত রক্ষায়, অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ের মধ্যে জনগণের আস্থা অর্জন ও রাষ্ট্রের সেরা ইউটিলিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠাকল্পে তিতাস গ্যাস কোম্পানির বৈষম্য বিরোধী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ‘ঐক্যজোট’ গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তিতাসের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, পেট্রোবাংলা বরাবরে সংস্কার প্রস্তাব সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করতে গেলে বিগত ফ্যাসিস্টের দোসর ও কতিপয় দুষ্কৃতকারী তিতাসের নিরস্ত্র ও অতি সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর লাঠি-সোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা করে এবং নিজেদের স্থাপনায় ভাংচুর চালায়।
পরবর্তীকালে, তিতাসের উপরেই অযাচিতভাবে উক্ত হামলার দায় চাপিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুগত ও সুবিধাভোগী পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার মিডিয়ায় তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিত্তিহীনভাবে চোর-বাটপার আখ্যা দিয়ে বিষোদগার করেন। জনেন্দ্র নাথ সরকার এর আগেও ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে আইন অগ্রাহ্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ০.৫৫ একর সম্পত্তি ব্যক্তিমালিকানায় নামজারি করে দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল যা ১২ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে বহুল প্রচারিত কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। এমন এক দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী কর্তৃক নির্বিচারে তিতাসের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোর, দুর্নীতিবাজ এর মতো ঘৃণিত অপবাদ দেয়ায় তিতাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং তিতাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সূচনা করেছে। তবুও, তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধৈর্য ধারণপূর্বক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে পেট্রোবাংলার ফ্যাসিস্ট চেয়ারম্যানের অনুসারী জিএম, জনাব শাহনেওয়াজ পারভেজ-কে তিতাস গ্যাসের এমডি হিসেবে পদায়ন (যাকে রাতের আধারে আর্মি, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এর প্রটোকলে অফিসে বসানো হয়) এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
সম্প্রতি চলমান শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমাতে ও নিজের পদ টিকিয়ে রাখতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এর ব্যক্তিগত নির্দেশে কোন প্রকার কারণ উল্লেখ ব্যতীত, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন বা তথ্য-প্রমাণের তোয়াক্কা না করেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌ. হেলাল উদ্দিন তালুকদারকে পদাবনতি প্রদানপূর্বক বদলী করা হয়। এছাড়াও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পেট্রোবাংলার ৫ (পাঁচ) জনকে বহিষ্কার করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে পতিত, ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদপুষ্ট তিতাসের বহিরাগত নবনিযুক্ত এমডি ও পেট্রোবাংলার স্বৈরাচারী চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের অপসারণ এবং ২০০২ সালে সরকারের জারিকৃত গেজেট অনুযায়ী কোম্পানির পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্বশাসনের ১ দফা দাবিতে তিতাসের প্রধান কার্যালয় ও আঞ্চলিক সকল কার্যালয়ে বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ লাল ব্যাজ ধারণ করেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বরাবর স্মারকলিপি দাখিল করেন।
অধিকন্তু, উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিক্ষুব্ধ তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগীদের মুখোশ উন্মোচন হতে থাকলে পেট্রোবাংলার ফ্যাসিস্ট চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ভীত হয়ে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের জনগণের কন্ঠরোধকল্পে প্রণীত তথ্য প্রযুক্তির কালো আইনের’ দ্বারা কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কন্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে নির্দেশনা প্রদান করে তার অনুসারীদের মাধ্যমে ক্রমাগত বিভাগীয় মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে চলমান প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তিতাস গ্যাস বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যজোটের আহবানে তিতাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফ্যাসিস্টদের অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদসূচক বুকে লাল ব্যাজ ধারণ করেছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছেন।
১ দফা দাবির সাথে তিতাস গ্যাস কোম্পানির বৈষম্যবিরোধী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদত্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো:
(১) ২০০২ সালে জারীকৃত সরকারি গেজেট অনুযায়ী কোম্পানিতে 'পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন' পুনর্বহাল ও প্রযোজ্য নিয়ন্ত্রণ সরাসরি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ন্যস্ত করা;
(২)'পেট্রোমাফিয়া সিন্ডিকেট' এর দোসর- পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকারকে অবিলম্বে অপসারণ ও চেয়ারম্যান হিসেবে একজন অভিজ্ঞ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ পদায়ন;
(৩) ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক 'বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন আইন, ২০২২'-এর মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে কোম্পানিসমূহের অধিকার খর্ব করা হয় যা বাতিল করা;
(৪) পেট্রোবাংলা কর্তৃক 'আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ' বন্ধকরণের দুরভিসন্ধিমূলক ও হঠকারী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করা;
(৫) টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিত করতে, দীর্ঘদিন ধরে বিশেষায়িত কোম্পানির সাথে চলমান বেতন বৈষম্য দূরীকরণে ও মেধাবী জনবল ধরে রাখতে কোম্পানিতে 'স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো' অবিলম্বে বাস্তবায়ন;
(৬) গ্রাহক সেবা সহজীকরণের স্বার্থে অতি দ্রুত 'One Stop Service' চালু করা;
(৭) পেট্রোবাংলা কর্তৃক স্বৈরতান্ত্রিক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বৈষম্যমূলক উপায়ে এমডি নিয়োগ বন্ধ করে, পদোন্নতির যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী নিজ কোম্পানি হতে পদোন্নতির মাধ্যমে এমডি পদে পদায়ন। প্রতি ০৩ বছরে অর্গানোগ্রাম একবার হালনাগাদ করা এবং কোম্পানিতে যৌক্তিক ও সাম্যতার ভিত্তিতে নিয়মিত পদোন্নতি;
(৮) প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও 'আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ' হালনাগাদ করা;
(৯) কোম্পানির অধিক্ষেত্রাধীন এলাকার জনসংখ্যা এবং কারিগরি-ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে 'সিস্টেম লসের যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য সীমা' নির্ধারণ করা;
(১০) 'Zero Emission' নিশ্চিতকল্পে অনতিবিলম্বে ৪০/৫০ বছরের পুরনো বিতরণ লাইনসমূহ পরিবর্তন করা এবং Metering System আপগ্রেড করে Remote Metering System, বিতরণ ব্যবস্থাপনায় Online Monitoring System প্রবর্তন করা।