রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, এবার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে অন্যান্য শহরেও। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ৫৫ শতাংশই ঢাকার বাইরে। তবে শতকরা ৫৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি পুরো দেশেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। ক্রমেই আক্রান্তের সংখ্যা ঠোকাতে চাইলে লার্ভা ধ্বংসে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত বছর বেসরকারিভাবে ঢাকাতে ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে এটা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ। ২০০০ সাল থেকে ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে চান্স অব ইনফেকশন ঢাকায় কমে গেছে। ফলে ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে। আমাদের ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে অধিক নজর দিতে হবে। এ সময় আমাদের সারা বাংলাদেশকেই টার্গেট করে স্থানীয় সরকারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে। এই কাজটির মূল দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৪২ জন। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ৮ হাজার ৬৯৯ জন। এছাড়া রাজধানীর দুই সিটি এলাকার বাইরে ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগে ১০ হাজার ৬৪৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত ১০৮ জনের মধ্যে দুই সিটিতে ৭২ জন এবং রাজধানীর বাইরে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর এই সময় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২, আর মৃত্যু ৮০৪। তবে গত বছরের আক্রান্তের বিবেচনায় মৃত্যুর হার ছিল দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর চলতি বছরে এ হার দশমিক ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৪ সালে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু অধিক হয়েছে।
২০২৪ সালের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বছরের শুরু থেকেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে এর ঊর্ধ্বগতি প্রবণতা দেখা যায় জুলাই মাসে। আর চলতি মাসে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। শুধু সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৬ দিনেই ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৫০১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। ডেঙ্গুর মাসভিত্তিক আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৫৫ জন আক্রান্ত ও ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ৩৩৯ ও মৃত্যু তিন, মার্চে আক্রান্ত ৩১১ ও মৃত্যু পাঁচ, এপ্রিলে আক্রান্ত ৫০৪ ও মৃত্যু দুই, মে মাসে আক্রান্ত ৬৪৪ ও মৃত্যু ১২, জুনে আক্রান্ত ৭৯৮ ও আট জনের মৃত্যু হয়। এ ধারায় পরিবর্তন আসে জুলাই মাসে। জুলাইয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৯ জনে। এ সময় মৃত্যু ঘটে ১২ জনের। আগস্টে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৫২১ ও মারা যায় ২৭ জন। আর চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৫০১ জন এবং মারা গেছেন ২৫ জন।
আক্রান্তের এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫ হাজার ২৮ জন রোগী ভর্তি হয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। ৪ হাজার ৭১১ জন ডেঙ্গু রোগী নিয়ে পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ হাজার ৫০৭ জন, ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ২২ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৯১২ জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৫ জন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৩৬৯ জন, ময়মনসিংহে ৩৯৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩২ জন, রংপুর বিভাগে ১০৬ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে মৃতের তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১০ জন, বরিশালে ১০ জন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬, ঢাকা বিভাগে তিন জন, খুলনায় পাঁচ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৯ হাজার ৩৪২ জন। যাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। আর এখন পর্যন্ত মৃত ১০৮ জনের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ৪৬ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ। অর্থাৎ আক্রান্ত কম হলেও মৃত্যু হার বেশি নারীদের।
ডেঙ্গু দমনে সারা দেশে কাজ হচ্ছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনার চেয়ে অ্যাকশনে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের সব পৌরসভা, সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা সে অনুযায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে।