সামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে আনা অর্থ পাচার এবং কর ফাঁকির অভিযোগগুলো মিথ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। মিথ্যা উল্লেখ করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পেট্রোবাংলাসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব অভিযোগের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে লেখা চিঠিতে এই আহ্বান জানান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরিস্থিতি প্রকাশ্যে স্পষ্ট করারও দাবি জানান তিনি।
ওই চিঠিতে স্থায়িত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্গমণের ওপর জোর দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে মোট ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তিগুলোকে রক্ষা করতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন আজিজ খান।
আজিজ খান বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ সামিটের সদিচ্ছার ক্ষতি করছে এবং বিদেশিক বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। মানি লন্ডারিং এবং ট্যাক্স ইস্যুতে কথিত তদন্তের মিডিয়া রিপোর্টের পর, সরকারি কর্মকর্তারা গোপন নথি খোঁজার জন্য ঢাকায় সামিটের অফিসে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
ওই চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, মিডিয়ার ভিত্তিহীন দাবির ভিত্তিতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের বিনিয়োগের পরিবেশে আস্থা নষ্ট করতে পারে।
কম্পানিটি তার কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে এসপিআই’র বিদেশি বিনিয়োগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
চিঠিতে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) বর্তমানে জাপানের জেরার সহ-মালিকানাধীন বাংলাদেশে সামিট কর্পোরেশন লিমিটেডের (এসসিএল) শেয়ার ২০১৬ সালে ১৬৭.৯ মিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। এই লেনদেনের অর্থায়ন করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ইএমএ পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে) এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অবকাঠামো বিকাশকারী ডেলিম ইনার্জি কম্পানি লিমিটেড। লেনদেনটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপ দ্বারা সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত এবং সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের প্রযোজ্য আইন অনুযায়ী করা হয়েছে।
এসপিআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক এবং জাপানের তাইয়ো লাইফ ইন্স্যুরেন্স কম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে ২.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে; যা পিডিবি ও আইবি’র জন্য ২৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে।
একাধিক চ্যালেঞ্জের কারণে ব্যবসা চাপে
চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন কারণে সামিটের ব্যবসাগুলো উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিপিডিবি কর্তৃক অত্যন্ত বিলম্বিত অর্থপ্রদান, মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার তীব্র অবমূল্যায়ন, উচ্চ সুদের হার, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের ঘাটতি এবং এর কিছু সুবিধার ওপর সাম্প্রতিক জনতার আক্রমণ।
সামিট সম্প্রতি ভিত্তিহীন ও মানহানিকর মিডিয়া রিপোর্টের শিকার হয়েছে। এই রিপোর্টগুলো মিথ্যাভাবে সামিট এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগ তুলেছে।
তদন্তের ভিত্তি নেই
চিঠিতে বলা হয়, যদিও আমরা বাংলাদেশ সরকারের যেকোনো তদন্তকে স্বাগত জানাই, আমরা বিনীতভাবে বলতে চাই, শুধু মিথ্যা ও উসকানিনিমূলক মিডিয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা মানি লন্ডারিং, ট্যাক্স ইত্যাদির তদন্তের জন্য গোপনীয় নথি চেয়ে আমাদের ঢাকা অফিসে গিয়েছিলেন।
‘আমরা বিশ্বাস করি, এই শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সদিচ্ছা হ্রাস পেয়েছে। মিথ্যা, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং চিন্তাহীন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানের আরো সূচনা বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সামিট গ্রুপের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থার অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ প্রিপেমেন্টগুলিকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা মনে করি মিডিয়ার ভুলবোঝাবুঝি এবং পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ক্ষমতা প্রদানের ভুল প্রতিবেদন বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ (পিএসপিজিপিবি) ১৯৯৬ সালে পাওয়ার সেক্টরে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য প্রণীত হয়েছিল।
পিএসপিজিপিবি ট্যারিফের একটি অংশ হিসাবে ক্ষমতা প্রদানকে সংজ্ঞায়িত করে ‘যা ঋণ পরিষেবা, ইক্যুইটির ওপর রিটার্ন, স্থায়ী অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, বিমা ও অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচ কভার করবে। ’
আজিজ খান বলেন, ‘আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করাছি, এসপিআই-এর পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো সে সময়ে পুরস্কৃত হয়েছিল এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে দক্ষের মধ্যে রয়েছে। এটা বিপিডিবি-এর মেরিট অর্ডার ডিসপ্যাচে তাদের নিয়োগের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। ভেরিয়েবলের মূল্যায়ন না করে বিভিন্ন শক্তির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের তুলনা করলে ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়। এসপিআই-এর প্রতি মেগাওয়াটের পেমেন্ট বাংলাদেশে সবচেয়ে কম, যা সাশ্রয়ী শক্তির সমাধানের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
এদিকে, চিঠিতে আজিজ খান ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনের পর তার সম্পদ সম্পর্কে ভুল ধারণার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, তার মোট মূল্য সম্ভবত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) এর সর্বজনীন আর্থিক বিবৃতি থেকে উদ্ভূত হয়, যেগুলো কেপিএমজি দ্বারা নিরীক্ষিত হয়।
এসপিআই-এর ২০২৩ ফিনান্সিয়ালস অনুযায়ী, কোম্পানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২.৪৯ বিলিয়ন ডলার। যার দায় ১.৪৬ বিলিয়ন ডলার, আর শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আনুমানিক ১.০৩ বিলিয়ন ডলার।
চিঠিতে লেখা হয়, এটাও লক্ষ করা যেতে পারে, ফোর্বস নিজেই ঘোষণা করেছে যে, সামিট গ্রুপের বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক্স এবং রিয়েল এস্টেটের স্বার্থ রয়েছে এবং জাপানের জেরা সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ’
আজিজ খান বলেন, আরোপিত সম্পদ বাংলাদেশের ভৌত সম্পদের প্রতিনিধিত্ব করে, যার মালিকানা তার পুরো পরিবারের, যাদের সবাই দেশের বাইরে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তিনি একজন সিঙ্গাপুরের নাগরিক এবং ১৯৮৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা বলেও জানান তিনি।
সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড