এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে স্থবিরতা কাটানোর জন্য অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। এর সুফল হয়তো অদূর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন মধ্য, বড় ব্যবসায়ীরা যে সংকটে আছেন তা হচ্ছে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সংকট।
করোনা থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগষ্টের গণঅভুত্থানে শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে উৎপাদন, বিকিকিনি বন্ধ থাকে। যে কারণে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে সেবা খাতে নেমে আসে চরম দুরাবস্থা।
করোনার সময় থেকে দেশের হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিকগুলোসহ সেবাখাতে সেবাগ্রহীতা শূন্য পর্যায়ে নেমে আসে। এর পর টানা আন্দোলন, সংগ্রাম, একতরফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘকালীন সংঘাত সংঘর্ষ, সর্বোপরি জুলাই-আগষ্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ থাকে।
আয় না থাকা সত্বেও কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চিকিৎসকদের বিপুল পরিমান বেতন ভাতা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিল ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। যে কারণে অন্যান্য শিল্প খাতের ন্যায় বিভিন্ন সেবাখাত বিশেষ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক, হোটেল, রেস্টুরেন্ট রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সাথে সম্প্রতি সাক্ষাত করে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত গভর্নরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি। যাতে সেবামুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ দেশীয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য সমূহ বিপদের সম্মুখীন।
যে সব ব্যবসায়ী, শিল্পপতি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন তারাও ঋণ খেলাপী হওয়ার পর্যায়ে। অতীতেও বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন দুর্যোগ বিপর্যয়ের পর ব্যবসা-বাণিজের স্বার্থে কিস্তি পরিশোধের সময় সীমা বৃদ্ধিসহ সুদের হার মওকুফ করার অনেক নজীর রয়েছে। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে শিল্প বাণিজ্য প্রসার ও ব্যাংক সংস্কারের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশংসিতও হয়েছে। সরকার দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের কাছে নতুন নতুন ঋণ দেয়ার জন্য যেমন অনুরোধ করছে তেমনি সরকারি ঋণ পরিশোধে সহজ কিস্তি নির্ধারণের জন্য চীন, জাপান, রাশিয়ার কাছে অনুরোধ করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অস্থিরতার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ঋণের কিস্তির সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি এখনও বাংলাদেশ ব্যাংক আমলে নিচ্ছে না।
এ অবস্থায় সরকারের নেয়া নানা উদ্যোগে অর্থনীতিতে সফলতা আসবে কিনা সেই প্রশ্ন থেকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর একজন যোগ্য অর্থনীতিবিদ। নিশ্চয়ই তিনি বিষয়টি ত্বরিৎ বুঝতে সক্ষম হবেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। তা না হলে বড় বড় শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ সেবাখাত খেলাপী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে। যে কারণে ব্যাংক ঋণের পুরো অর্থই আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।