বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পরিবর্তন সাধন যেমন তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) পক্ষে সম্ভব নয়, তেমনি বহন করতে সক্ষম হবেন না এমন দায়িত্বও কাঁধে নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আকস্মিক সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটা অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না। সেটা আমরা সবাই জানি। আর সঙ্গত কারণে তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রতি আমাদের সমর্থন সেদিনও ছিল আজও আছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরই নিতে হবে।
গতকাল বিকালে ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঢাকায় শহীদ রাকিব ও শহীদ সাব্বীর হত্যার বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে এ গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার আগে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির কারণে বক্তব্য সংক্ষেপ করে নিজের অসমাপ্ত কথাগুলো পরে এক সময় ঝিনাইদহের মানুষকে বলবেন বলে জানান তারেক রহমান। গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন- ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ এবং পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুজ্জামান মনা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের যে মূল দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আরেকটি বিষয় স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া লোকজন এখনো প্রশাসনে বিদ্যামান আছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছোট ছোট বিষয়গুলো বড় আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের শীর্ষপর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার দৃশ্যমান প্রয়োগ। সরকার পরিচালনা একটি অতি সংবেদনশীল এবং জটিল কাজ। এখানে সামান্য বিচ্যুতি যেমন বিরাট একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। তেমনি সামান্য অসতর্কতাও অতি আবশ্যক বিশ্বাসকে করতে পারে দুর্বল। আর আমাদের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ঐক্যতে ধরাতে পারে ফাটল। এর যে কোনো একটিই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। মনে রাখা দরকার- দেড় যুগ ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারের দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রেতাত্মা এত সহজে তার বিষ-নিঃশ্বাস থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেবে না।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে আমরা মাঝে মাঝেই তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) অসহায় ও বিপর্যস্ত হতে দেখছি। এর অবসান না হলে এদের বেড়াজালে আবদ্ধ সরকার ছোট ছোট বিপর্যয়কে এক সময় মহাবিপদ হিসেবে নিজেদের সামনে দেখতে পাবে। তখন প্রতিকারের পথ হয়ে পড়বে অতি সংকীর্ণ।
তারেক রহমান বলেন, মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যবসা বাণিজ্যে স্বস্তি, জনমনে নিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাত্যহিক নাগরিক সুবিধা দিতে একটি নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার মহাজাগরণে আমাদের সামনে আরেক স্বাধীনতা আর বিজয়ের বার্তা হয়ে এসেছে। অতি উৎসাহে আমরা যদি এটাকে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর সফলতা বলে চিহ্নিত করে ফেলি- তাহলে সম্ভবত আমরা আরেকটি ইতিহাস বিকৃতির ফাঁদে পা দেব।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচার পতনের এই মহাসমরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা, গৃহিণী, শ্রমিক সবার অবদানকে আমরা যদি মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই, কিংবা গত সতেরো বছর ধরে অবিরাম আন্দোলনে গুম, খুন, মামলা, হামলা আর নির্যাতনে পিষ্ট লাখ লাখ রাজনৈতিক কর্মীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নে অসমর্থ হই- তাহলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর এবং বিশেষ করে জুলাই ও আগস্ট মাসে যে মানুষগুলো আত্মাহুতি দিয়েছেন, যে মানুষগুলো নিজেদের সবকিছু উজাড় করে এদেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছেন। আমাদের সবার ভবিষ্যতের জন্য জীবনবাজি রেখে যারা যুদ্ধ করেছেন। তারা, তাদের এই আত্মত্যাগ সেই দিনই সফলতা লাভ করবে, যেদিন এই দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে তাদের অধিকার ফিরে পাবে এবং রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি একইভাবে যেদিন বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হবে। একমাত্র সেই দিনই আমাদের শহীদদের- ’৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ এবং একই সঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের এই ত্যাগ সফলতা লাভ করবে। আমাদেরকে সেই প্রতিজ্ঞা নিতে হবে। বাংলাদেশকে ফিরেয়ে আনতে হবে একটি স্বাভাবিক পথে।
গীতিকার ও সংগীত পরিচালক ইথুন বাবুর নেতৃত্বে জাসাসের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা গণসমাবেশের শুরুতেই জাগরণ ও গণমুক্তির গান পরিবেশন করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-তথ্য সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুর রহমান পাপ্পু প্রমুখ। এ ছাড়া ছয়টি উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এর আগে দুপুরে ২টা নাগাদ মিছিলে মিছিলে ঝিনাইদহ শহর জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করা হয়। মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন জাসাসের শিল্পী মৌসুমী চৌধুরী, পরান আহসান, রোজেন রহমান, অধরা, আকলিমা ও ডন প্রমুখ।