জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: মায়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই চলছে। ফলে দেশটিতে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে। এ সহিংসতার জেরে ধরে সম্প্রতি নাফনদী পার হয়ে আবারও ২৪ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা দালালদের সহায়তায় অনুপ্রবেশ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও চলমান যুদ্ধে আরও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা করছেন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। তারমধ্যে নতুন করে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় স্থানীয়দের মাঝে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে।
জানা গেছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে চলমান যুদ্ধে মংডু ও তার আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জনপ্রতি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে নাফনদী হয়ে এ দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারীরা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে পুরাতন রোহিঙ্গাদের আত্নীয়-স্বজনদের কাছে স্থান করে নিচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা পরিবার ধনাঢ্য হওয়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে উখিয়া-টেকনাফসহ জেলা শহর কক্সবাজারে অবস্থান করছে।
টেকনাফ ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল ইসলাম জানান, মায়ানমারে যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা যে দিকে পারছে সেদিকে পালিয়ে যাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের মংডুতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে যারা প্রবেশ করেছে সেসব রোহিঙ্গাদের মধ্যেও অনেকেই আহত রয়েছে। যার কারনে নতুন রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
টেকনাফের উনচিপ্রাং পুটিবনিয়া ক্যাম্পে পালিয়ে আসা আয়াজসহ অনেকেই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, মায়ানমারে যুদ্ধের কারণে প্রাণ বাঁচাতে এ দেশে পালিয়ে এসেছি। আসার সময় দালালরা জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। এখানে এসেও খাদ্য সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে, আবারও নতুন করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির নেতা রাশেদুল করিমসহ একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি জানান, এমনিতে আইনশৃঙ্খলা অবনতিসহ ভয়াবহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তার মধ্যে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। তাদের সহায়তা করছে ২ সীমান্তের দালাল সিন্ডিকেট। তাদের প্রতিহত করা না গেলে কক্সবাজারবাসীকে খেসারত দিতে হবে বলে তারা মনে করেন।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে এ দেশে প্রবেশ করছে। তারা সাথে করে মাদক, স্বর্ণ ইত্যাদি নিয়ে আসছে যা আমাদের এলাকার জন্য অশনি সঙ্কেত বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় আরও টহল জোরদার করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড শুধু কক্সবাজারে সীমাবদ্ধ নেই, তারা পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। নতুন রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি দ্রুত সব রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানান এই আইনজীবীর।
এ নিয়ে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মায়ানমারের মংডুতে চলমান যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে সম্প্রতি ২৪ হাজার রোহিঙ্গা দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এসব রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের পাশাপাশি বাড়ি-ঘরে অবস্থান করছে। তাদেরকে সেখান থেকে ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর কথা বারবার বলা হলেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে ইউএনও জানান, নাফনদীসহ বিশাল এলাকা সীমান্ত হওয়ায় লোকবল সঙ্কটের সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে রোহিঙ্গারা ও দালাল চক্র সিন্ডিকেট। তবে এ বিষয়ে বিজিবি’র কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।