ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পদত্যাগ করায় আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি, পদ সৃজন, বিলুপ্তিসহ বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন ও অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘ক্রান্তিকালীন বিশেষ বিধান’ যুক্ত করে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আইন, ১৯৯৪ সংশোধন করা হচ্ছে। নতুন করে স্পিকার নির্বাচন ও কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত সংসদ সচিবালয়ের সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানটির সচিবকে দেওয়ার প্রস্তাব করে ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার।
এটি অনুমোদনের জন্য শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এটি কার্যকর হলে সংসদ সচিবালয়ের সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হবেন প্রতিষ্ঠানটির সচিব। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।
এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। হাসিনা সরকারের পতনের ২৭ দিনের মাথায় ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ।
তাঁকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হলে ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন। এর পর থেকে টানা তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর শিরীন শারমিন চৌধুরী আবার স্পিকার নির্বাচিত হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এক হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বর্ণ শ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ আগস্ট শিরীন শারমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। এর আগে ১৫ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে—যেহেতু সংসদ ভেঙে গেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে মনে হয়েছে, আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান আছে। তাই সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ প্রণয়ন ও জারি করলেন। এতে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আইন, ১৯৯৪-এর (১৯৯৪ সালের ৮ নম্বর আইন) ধারা ২১-এর পর নতুন ধারা ২২ সংযোজিত হবে।
‘ক্রান্তিকালীন বিশেষ বিধান’ নামে নতুন ধারায় বলা হয়েছে : (১) এই আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, জাতীয় সংসদ ভঙ্গ থাকলে এবং ভঙ্গকালীন সময়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার সংবিধানের ৭৪(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করলে এবং রাষ্ট্রপতি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে ও সংসদ সচিবালয় কমিশন বিদ্যমান বা বলবৎ না থাকলে, জাতীয় সংসদে স্পিকার নির্বাচন ও কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত জাতীয় সংসদ সচিবালয় আইন এবং এর অধীন প্রণীত বিধিমালা ও নীতিমালাসমূহে সব ধরনের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা (সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগ, নিয়োগ বিধি সংশোধন, পদোন্নতি, পদ সৃজন ও বিলুপ্তি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা নির্ধারণ ও তাঁহাদের হ্রাস-বৃদ্ধি, সচিবালয়ের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন ও বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়সহ অন্য সব বিষয়) সংসদ সচিবের ওপর ন্যস্ত হবে।
এ ছাড়া (২) উপধারা (১)-এ উল্লিখিত (ক) পদ সৃজন ও বিলুপ্তি; (খ) কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা নির্ধারণ; (গ) কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধিকরণ; (ঘ) যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতি এবং (ঙ) নিয়োগ বিধি সংশোধন—সংসদ সচিবের সভাপতিত্বে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অর্থ বিভাগের সচিবের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পন্ন হবে।