ঢাকা
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:২৪
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ৬, ২০২৪

পোশাক খাতে অস্থিরতা: অর্ডার যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশে

পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষে চরম দুর্দশা বিরাজ করছে। জানা গেছে, শ্রমিক অসন্তোষের প্রেক্ষিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়ে গেছে। কারখানার মালিকরা বলছেন, কার্যাদেশ কমে যাওয়ার চেয়েও বড় শঙ্কা অপেক্ষা করছে সামনের দিনে। তাদের ভাষ্য, এভাবে চলতে থাকলে ইন্ডাস্ট্রিই চলবে না।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ভালো যাচ্ছে না বাংলাদেশের। জুলাই জুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নৈরাজ্য, সহিংসতা আর সংঘাতের পর কারফিউ জারি হয়। প্রথমবারের মত দীর্ঘ সময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে সারা পৃথিবীর সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিশ্ব বাজারে তৈরি হয় ‘আস্থার সংকট’।

আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে হাল ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় আশার আলো দেখেছিলেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে আশার প্রদীপ নিভে যায় ক্ষমতার পালাবদলের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে।

বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হামলা হয়। ঝুট ব্যবসার দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি নিয়ে এ খাতে ফের অস্থিরতা তৈরি হয়। আর শ্রমিক অসন্তোষ যেন কফিনে ‘শেষ পেরেক’ ঠোকে। প্রতিযোগিতামূলক দেশগুলো এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বা ক্রেতারাও তাদের দিকে ঝুঁকছে।

এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলছেন, ৩০ শতাংশের মত কার্যাদেশ অন্যান্য দেশে চলে গেছে।

স্প্যারো গ্রুপের শোভনও একই কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, যখন ক্রেতারা বলছেন এখন আর লাগবে না। আমরা বুঝি তারা অন্য দেশে এ কার্যাদেশ দিয়েছেন।

এক কোটি ৭০ লাখ পোশাকের একটি কার্যাদেশ হাতছাড়া হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি পোশাকের মূল্য ৪ ডলার করে হলেও সবগুলোর মূল্য কত হয় তা হিসাব করে দেখুন। এ আদেশটি ২-৩টি কোম্পানি মিলে পেত। দ্য এন্টায়ার অর্ডার হ্যাভ অলরেডি মুভড।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতছাড়া হওয়া কার্যাদেশগুলো বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে যাচ্ছে।

কার্যাদেশ বাতিল হওয়ার বিষয়টি ১২ সেপ্টেম্বরের হওয়া সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও বলেছেন।

বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি থেকে আয় করে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। এর মধ্যে পোশাক রপ্তানি থেকেই আসে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

পোশাক খাতের সবচেয়ে রমরমা সময় যায় জানুয়ারি-মার্চ সময়ে। ওই সময়টায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে ছুটি ও ভ্রমণের আমেজ থাকায় তখন বাংলাদেশের পণ্যের বিক্রি বাড়ে।

ওই সময়ের পণ্যের কার্যাদেশ পেতে নমুনা পাঠাতে হয় আগস্টের ছুটির আগে। কিন্তু দেশে জুলাই থেকে শুরু হওয়া অস্থিরতা ঘিরে কারখানা বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটের কবলে পড়ে অনেকেই নমুনা পাঠাতে সমস্যায় পড়েছেন বা পিছিয়ে পড়েছেন।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইন্টারনেট ও যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে ‘আস্থার’ যে সংকট প্রথমে হয়েছিল, তার মাশুল এমনিতেই গুনতেই হত। এখন শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অচলায়তন তৈরি হল।

এর জেরে জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৬০০ কোটি (৬ বিলিয়ন) ডলার পর্যন্ত রপ্তানি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শোভন ইসলাম।

তাছাড়া রপ্তানিকারকরা যে ৩০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিলের কথা বলছেন, তাতেও একই পরিমাণ রপ্তানি কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্গে চলতি কার্যাদেশের উৎপাদন ও রপ্তানি সঠিক সময়ে না করা গেলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।

জানা গেছে, গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংগঠনের উত্তরা কার্যালয়ে ‘বিশেষ সাধারণ সভায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রেদওয়ান আহমেদ বলেন, সমস্যার শুরু হয়েছিল নাসা গ্রুপ থেকে।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট’ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রেদোয়ান বলেন, শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে শ্রম অসন্তোষ তৈরি করছেন তারা। সমস্যা তো সামলানো গেছিল, শুরুতেই ওখানে হাত দিলে এত বড় হত না। এখন নজরুলরা কোটি কোটি টাকা ঢালছেন শ্রমিকদের পেছনে ভাঙচুর করতে, কারখানা বন্ধ করতে। সরকার ও শিল্পকে ধ্বংস করতে।

বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শ্রমিকদের নামে ‘বিভিন্ন ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক চক্র’ ১৮ দফা দাবি তুলেছে।

সেই সভায় উপস্থিত সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন, নতুন করে মজুরি বৃদ্ধি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না।

এদিকে শ্রমিকদের দাবি সব বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ; হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সকল কারখানায় সমান হারে বাড়ানো; সকল কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড চালু; বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা; শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা; বিজিএমইএ নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং বন্ধ করা; বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা। (বায়োমেট্রিক লিস্টিং হল আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কারখানায় প্রবেশাধিকার। আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ না করলে কারখানায় প্রবেশ করতে পারেন না কর্মীরা।)

সকল প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার; ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; কলকারখানায় নিয়োগ বৈষম্যহীন করা (নারী-পুরুষ সমান হারে নিয়োগ); জুলাই বিপ্লবে ‘শহীদ’ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সেবা; রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ; শ্রম আইন অনুযায়ী সকল কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন; অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা এবং নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের দাবির ‘যৌক্তিকতা’ তুলে ধরে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, বেশকিছু কারখানা বকেয়া দিচ্ছিল না। তাদের আন্দোলনের কিছু অংশ জেনুইন। এর বাইরে যা হচ্ছে, তার পেছনে ‘আগের সরকারের সঙ্গে মালিকের সংশ্লিষ্টতা’ একটি কারণ হতে পারে বলে মনে করেন জলি।

তিনি বলেন, বিক্ষোভ বেশি হচ্ছে আগের সরকারের সাথে যাদের সম্পর্ক তাদের কারখানায়। মালিকরা দুর্নীতি, ঘুষ, ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়াচ্ছে।

শ্রমিকরা অনেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে হতাহত হয়েছেন দাবি করে তাদের জন্য ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান জলি।

তিনি বলেন, এই সরকারের প্রথম গুলি হয়েছে শ্রমিকের ওপর। এর তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ খাত অস্থিতিশীল থাকলে দেশের ক্ষতি, রপ্তানির ক্ষতি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আগের সরকারের সংশ্লিষ্টরা চেষ্টা করছে। এ খাত স্বাভাবিক করতে সরকারকে তাই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram