ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগবাণিজ্য, ঘুষ, অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তাঁর স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান এবং মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খানের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে ৪১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ১০৯ টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল দুদকের কর্মকর্তারা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে এটিই দুদকের প্রথম কোনো মামলা। গতকাল বিকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, আসাদুজ্জামান খান ও তার পরিবারের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ৬০ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৫৬ টাকা।
৩৬টি ব্যাংক হিসাবের অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার পরিমাণ ৪০০ কোটি ৭৪ লাখ ৬৮ হাজার ১০৯ টাকা। এর মধ্যে আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৫ লাখ ৯২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৬ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে। এই মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। দুদক জানায়, দ্বিতীয় মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের সঙ্গে স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- স্বামীর দুর্নীতির টাকায় সম্পদশালী হয়েছেন তাহমিনা। তাহমিনার ১০টি ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি ৭৭ হাজার ৭৪৫ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলা করেন দুদক উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। আর তৃতীয় মামলার আসামি আসাদুজ্জামান খান ও তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান। তাদের বিরুদ্ধে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫০২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শাফি তার নামে ব্যাংক হিসাব খুলে সেখানে ৮৪ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭২ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। এই মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
চতুর্থ মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার মেয়ে শাফিয়া তাসনিম খান। তাদের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। শাফিয়ার ব্যাংক হিসাবে ২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জিন্নাতুল ইসলাম। এ ছাড়া পঞ্চম মামলায় এপিএস মনির হোসেনের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আবারও আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক হিসাবে ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ৮৩৪ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এই মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হুসাইন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর-রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, পুলিশের ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্যা ইব্রাহিম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। গত ১৫ আগস্ট আসাদুজ্জামান খান ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ২১ আগস্ট আসাদুজ্জামান খানের পরিবার এবং তার সাবেক পিএস হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপুসহ আটজনের ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেনের তথ্য তলব করে দুদক।