নিজের সুবিধার্থে বাসার কাছাকাছি অফিস ভাড়া নিয়েছিলেন সাবেক মেট্রোরেল এমডি এম এ এন ছিদ্দিক। তার বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব ছিল মাত্র ৭০০ মিটার। এই অফিস ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে খরচ হতো কয়েক লাখ টাকা। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করা সাবেক এমডির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের নিজস্ব ভবন থাকা সত্ত্বেও এতদিন তিনি ভাড়া করা অফিসে কাজ চালিয়ে গেছেন, যার জন্য প্রতিষ্ঠানটির অপচয় হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক এমডির সুবিধার্থে অফিসটি স্থানান্তরিত করা হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া বাবদ এ বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত এমআরটি লাইন-৬ এর ডিপোতে রয়েছে ডিএমটিসিএলের নিজস্ব ভবন।
চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরপর দেড় বছরের জন্য ছিল ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি)। ২০২১ সালে ভবনটি প্রস্তুত হওয়ার পর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে অফিস করেছেন। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতদিন ইস্কাটনের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ভাড়া করা অফিসে কাজ চালিয়ে গেছেন।
চলতি মাসে তাঁরা অবশেষে দিয়াবাড়ির নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের কারণে এতদিন অফিসটি স্থানান্তর করা হয়নি। ছিদ্দিক বেইলী রোডের সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টার গুলফিশানে থাকতেন, যা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের কাছাকাছি। নিজ সুবিধার্থে তিনি ওই ভবনে অফিস চালিয়ে গেছেন, যদিও দিয়াবাড়ির ডিএমটিসিএল ভবনটি দৃষ্টিনন্দন এবং অফিস করার উপযুক্ত ছিল।
ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, দিয়াবাড়ি অফিস ভবন প্রস্তুত থাকার পরও সাবেক এমডি ছিদ্দিকের কারণে অফিসটি সেখানে স্থানান্তর করা যায়নি।
ছিদ্দিকের নির্দেশে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে কার্যক্রম চালানো হয়েছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাবেক এমডি কমলাপুরের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিয়াবাড়ির অফিস চালু করতে নিষেধ করেছিলেন। তবে এখন, কমলাপুরের কাজ অসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও দিয়াবাড়িতে অফিস স্থানান্তর করা হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মেট্রোরেলের অফিস ভাড়া করা হয়। এমআরটি লাইন-১ এর জন্য ১১,৮৯০ স্কয়ারফিট জায়গা ভাড়া নেয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ভাড়া বাবদ ডিএমটিসিএলকে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সাবেক এমডি ছিদ্দিকের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছিল মেট্রোরেল প্রতিষ্ঠানটি। তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পেত না। কর্মকর্তাদের মধ্যেও তাঁর ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ ছিল। গণমাধ্যমের সঙ্গেও কেউ কথা বলতে সাহস করত না, সবকিছুই সাবেক এমডির নির্দেশনা অনুযায়ী চলতো।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক জানান, ডিএমটিসিএলের অফিস দিয়াবাড়িতে হওয়ার কথা ছিল এবং চুক্তি অনুযায়ী ভবনও প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু অস্থায়ীভাবে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অফিস স্থাপনের কারণে এই অর্থ অপচয় হয়েছে। এর সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত এবং যারা এর জন্য দায়ী, তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা উচিত।
সরকারি হিসাবমতে, মেট্রোরেলের বিভিন্ন স্টেশন চালু করার জন্য প্রথমে ৩৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলা হয়েছিল। তবে মাত্র দেড় কোটি টাকায় কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন চালু করা সম্ভব হয়েছে। মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে ভবিষ্যতে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।