ঢাকা
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:২০
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ২৯, ২০২৪

২ লাখ কোটি টাকা সরিয়েছেন শেখ হাসিনার সহযোগীরা!

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সহায়তায় ব্যাংক খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সবল ব্যাংকগুলো দখলে নিতে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের সাহায্য করেছে ডিজিএফআই। যে কোনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেই এটি সবচেয়ে বড় এবং সর্বোচ্চ ব্যাংক ডাকাতি। এ মাত্রায় আর কোথাও ব্যাংক লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। আর এর পেছনে ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা।’ দেশ থেকে যে অর্থ দুবাই, সিংগাপুর বা অন্যান্য স্থানে পাচার করে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন, তা উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, দেশের চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। গভর্নর যে পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ করেছেন, তার পরিমাণ এ বাজেটের ২৫ শতাংশের সমান।

প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যমে দেওয়া ঐ সাক্ষাৎকারে গভর্নর ড. আহসান মনসুর বলেন, ‘প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দপ্তরের সাবেক কিছু কর্মকর্তা শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক দখল করতে সহায়তা করেছেন। এসব ব্যাংক দখল করে আনুমানিক ২ লাখ কোটি টাকা (১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন শেয়ারধারীদের ঋণ দেওয়া ও আমদানির অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীদের মাথায় বন্দুক না ঠেকলে এটা হতে পারত না। ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা অন্তত ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বের করে নিয়েছেন। এজন্য তারা প্রতিদিনই নিজেদের জন্য ঋণ অনুমোদন করেছেন।’

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন এমানুয়েল আরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে এস আলম গ্রুপ জানিয়েছে, গভর্নরের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর মন্তব্যের জন্য তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি এবং ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। পরে এ সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর নিযুক্ত হন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে গভর্নর বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কিছু সদস্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে এবং এরপর হোটেলের মতো জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর অস্ত্রের মুখে তাদের তাদের শেয়ার এস আলমের কাছে বিক্রির জন্য এবং তাদের পরিচালকের পদ ছাড়তে বলেন। একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।’

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, জোর করে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৩ সালে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে জড়িত লোকেরা তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পরামর্শ মতো পরিচালক নিয়োগ এবং ব্যাংকের এক জন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে সরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের দ্বারা তল্লাশি চালানো।’ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৭ সালে তিনি যখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যাচ্ছিলেন, তখন তাকে এক জন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপর পুরো একটি দিন তাকে আটকে রেখে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা ব্যাংকের জাল কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। আমাকে শেষ পর্যন্ত একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

গত দশকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে। গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘সাতটি ব্যাংকে তাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ’ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

আহসান এইচ মনসুর তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ে দখল করা হয়েছিল এমন প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেশে ও দেশের বাইরের আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই।’ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ার ভালো মানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে সেগুলোকে পুনরায় অর্থায়নের পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়া সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করারও পরিকল্পনা করছে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram