ঢাকা
১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৭:৫০
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ১১, ২০২৪

শুল্ক বাড়লে তাৎক্ষণিক প্রভাব, প্রত্যাহারের ছয় দিনেও দাম কমেনি পেঁয়াজের!

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করা কিংবা বাড়তি শুল্ক আরোপ করার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটেন। অথচ দেখা গেছে, বাড়তি শুল্কের পেঁয়াজ আড়তে তখনো আসেনি। যা মজুদ ছিল সেগুলোতেই বাড়তি শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজের দাম কমাতে গত ৬ নভেম্বর আমদানি করা পেঁয়াজে কাস্টমস শুল্ক ৫ শতাংশ ও রেগুলেটরি শুল্ক ৫ শতাংশসহ মোট ১০ শতাংশের পুরোটাই অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর ফলে দেশে শুল্কমুক্ত পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহারের ছয় দিন পার হয়ে গেলেও এখনো পণ্যটির দাম কমেনি। ভোক্তাদের কৌতূহল, যেভাবে শুল্ক বাড়লে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন সেভাবে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে দাম কেন কমান না?

সাধারণ ভোক্তাদের কৌতূহলী মনের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গতকাল রবিবার দুপুরে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে একাধিক পেঁয়াজের আড়তদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, খাতুনগঞ্জে পাকিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন থেকে সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ যেমন আসে, তেমনিভাবে স্থলপথে মায়ানমার ও ভারত থেকেও আসে পেঁয়াজ।

আর দেশে উৎপাদিত পণ্যও কমবেশি এখন সরবরাহ রয়েছে। এ ছাড়া এখানে পেঁয়াজের কমিশন এজেন্ট ও আড়তদার দুভাবে ব্যবসা করা হয়। কমিশন এজেন্টরা আমদানিকারক থেকে কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা কমিশনে পণ্য আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। আর আড়তদাররা বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে।

আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট ব্যবসায়ীদের দাবি, দাম বাড়ানোর কাজটি করেন আমদানিকারকরা। তারা ফোনে ফোনে দাম বাড়িয়ে দেন। সে দামেই এখানে পণ্য বিক্রি হয়। তাই শুল্ক বাড়লে ওই পণ্য বাজারে না আসার আগেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর শুল্ক কমালে তার প্রভাব তািক্ষণভাবে পড়ে না বাজারে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১০৭ টাকায়। এ ছাড়া মিসরের পেঁয়াজের কেজি ৭০-৭৫ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। দেশীয় ও মায়ানমারের পেঁয়াজ এখন আড়তে নেই। তবে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের প্রতি কেজি ১১০-১১৫ টাকার নিচে মিলছে না।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র তথ্যমতে, চলতি মাসের ১ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত মিসর, পাকিস্তান থেকে ৫০৭ টন পেঁয়াজ এসেছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, কয়েক মাস আগে ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৮ রুপিতে। গত মাসে দেশটিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকারকদের এসব পেঁয়াজ ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের মসলাপণ্যের আড়তদার কাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসছে না। এ ছাড়া আড়তগুলোতে পণ্যটির সংকট হচ্ছে। তাই দাম কমছে না। আর শুল্ক প্রত্যাহার হয়েছে গত বুধবার। বাজারে যা আছে সবই আগের শুল্কে আমদানি করা পণ্য। শূন্য শুল্কের পেঁয়াজ বাজারে এখনো আসেনি। তাই বাড়তি দাম এখনো কমেনি।

রনি বিশ্বাস নামের খাতুনগঞ্জের আরেক আড়তদার বলেন, দেশে পাকিস্তান, চীন, মিসর, তুরস্ক, মায়ানমার থেকে পেঁয়াজ এলেও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যটি। এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও পেঁয়াজের দাম ৬০-৭০ রুপি। সেখানে বাড়তি দামের কারণে পণ্য আমদানি কমেছে। এখন সরকার আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ তুলে নেওয়ায় দাম কমে আসবে যদি শূন্য শুল্কের পেঁয়াজ বাজারে আসে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহেসান উল্লাহ জাহেদী বলেন, সরকার পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। এ শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। এখন বাজারে ওই ১০ শতাংশ কমবে। কিন্তু উৎপাদনস্থলে দাম বাড়তি। তাই পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকার নিচে নামার সম্ভাবনা নেই।

তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ ব্যবহার হয় দেশীয়, ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি করা পণ্যটি। দেশীয় পেঁয়াজ আসতে আরো দুই মাস সময় লাগবে। আর ভারতেও পণ্যটির দাম বেশি। আর মায়ানমার থেকে যা আসছে সেটা তুলনামূলক কম। আর পাকিস্তান, তুরস্ক, মিসর ও চীনের পণ্যটিও সরবরাহ কম। সরবরাহ বাড়ানো গেলে দাম আপনাআপনি কমে আসবে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুল্ক কমিয়ে কোনো লাভ নেই যদি ঠিকমতো বাজার তদারকি না করে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকলেও মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তো পণ্যটি আমদানি হচ্ছে, আমদানিকারকের কেনা কত পড়ছে, পাইকার কত দিয়ে কিনছে এবং বিক্রি করছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাহলে দামের আসল রহস্য বের হবে।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram