বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্দেশীয় ট্রেন চলাচল অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের বারবার প্রস্তাবেও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কোনো সাড়া দিচ্ছে না ভারত সরকার। এমন পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তা এখনই পরিষ্কার হচ্ছে না।
ট্রেন চলাচল বন্ধের সময় মিতালী এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেন বাংলাদেশে আটকা পড়ে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্রেনটি আটকে থাকায় একটি লাইন দখল হয়ে রয়েছে। ফলে লাইনটি অন্য ট্রেনের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আবার মিতালী এক্সপ্রেসের মালিক ভারত হওয়ায় এর কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে। ট্রেনটি ফিরিয়ে দিতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
সেই আলোচনার ভিত্তিতে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, খালি ট্রেনটি ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ নিরাপত্তা দিতে হবে। এমনকি ফেরার পথে খালি ট্রেনের সঙ্গে সীমান্ত পর্যন্ত পুলিশের বহর চায় ভারত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতের এমন প্রস্তাবের বিপরীতে পুলিশের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে।
মতামত পাওয়ার পর বাংলাদেশ রেলওয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। খালি ট্রেনটি যত দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া যায় ততই ভালো। ট্রেনের কোনো ক্ষতি হলে সম্পর্ক খারাপ হবে।’
নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশের সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়। ওই দিন থেকে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ থাকলেও পাঁচটি সচল আছে। এর মধ্যে তিনটি পথে যাত্রীবাহী ট্রেন ১৮ জুলাইয়ের আগে নিয়মিত চলাচল করেছে। ট্রেনগুলো হলো মিতালী এক্সপ্রেস, মৈত্রী এক্সপ্রেস ও বন্ধন এক্সপ্রেস।
গত ১৭ জুলাই রাতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছে। পরদিন রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে এর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেনি।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে চলাচলকারী আন্তর্দেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনও বর্তমানে বন্ধ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘ভারত কেন ট্রেন চালাতে চাইছে না তা আমাদের জানা নেই। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’
এদিকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকায় বন্ধ থাকা ভিসার প্রক্রিয়া ভারতকে চালু করতে হবে। আগের নেওয়া ভিসায় বাসে ও বিমানে যাত্রীরা যাতায়াত করছে। তবে পুরনো ভিসার মেয়াদ শেষ হতে থাকায় সেই সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশকে এখনো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য নিরাপদ মনে করা হচ্ছে না। তাই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বন্ধ রাখা হয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর বিষয়ে আগস্ট মাসে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের সঙ্গে বেশ কয়েকবার অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। তবে তাতে সায় দেয়নি ভারত। গত ১৯ আগস্ট দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন বিভাগের এক চিঠির বিপরীতে পণ্যবাহী ট্রেন চালুর বিষয়ে অনুমতি দেয় ভারত। ওই রাতেই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনাপত্তি পায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক শাখার একটি সূত্র জানিয়েছে, যাত্রীবাহী ট্রেন পুনরায় চালুর বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হলেও আশানুরূপ জবাব পাওয়া যায়নি। প্রথমে নিরাপত্তার কথা জানানো হলেও ভারতের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কংক্রিট কোনো আপডেট নেই।