সরকারের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন। রাজধানী ঢাকার সুপারশপগুলোতে বন্ধ হলেও সারা দেশে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। রাজধানীর বড় কাঁচা বাজারগুলোতে পলিথিনের ব্যাগের বিকল্প রাখা হলেও মহল্লার ছোট ছোট বাজার ও দোকানে তা নেই। আবার অবৈধ পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
আবার জনগণের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতিও লক্ষ করা গেছে। এই অবস্থায় পলিথিনবিরোধী অভিযান সফল করতে বিকল্প চিন্তার আহবান জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিবেশের সুরক্ষায় দুই যুগ আগে পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসংক্রান্ত আইনও প্রণয়ন করা হয়।
শুরুতে আইন কিছুটা কার্যকর হলেও বিগত কয়েক বছরে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত পয়লা অক্টোবর থেকে সুপারশপে এবং পয়লা নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অভিযান চালানোর কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন সুপারশপে মনিটরিং কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পলিথিন শপিং ব্যাগের বিরুদ্ধে গত দুই সপ্তাহে ৯৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। দুই শতাধিক দোকান বা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা এবং বিপুল পরিমাণ পলিথিন জব্দ ও অবৈধ পলিথিন উৎপাদনকারী চারটি কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। এসব অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারে পলিথিন কারখানার শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে অভিযান পরিচালনাকারী যৌথ বাহিনী।
স্থানীয়রা জানায়, চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় অভিযানে যাওয়া যৌথ বাহিনীর (সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ) সদস্যরা কয়েকটি কারখানার তালা ভেঙে পলিথিন তৈরির বিপুল কাঁচামাল উদ্ধার করেন। তিনটি কারখানাকে জরিমানা ও সিলগালা করেন। তবে অভিযান শুরুর আগে কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বেঞ্চ দিয়ে পথরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। তাঁরা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে কারখানা বন্ধের দাবি জানান।
অভিযানটির নেতৃত্ব দেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বেগম রুবিনা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ অভিযানের খবর পেয়ে কারখানায় তালা দিয়ে চলে যায়। পরে তালা ভেঙে কারখানাগুলোতে ঢুকে পলিথিন তৈরির কাঁচামাল জব্দ করা হয়। কারখানাগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পলিথিনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। সে অনুযায়ী নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করতে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, অভিযানে রাজধানীর সুপারশপে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সেখানে পলিথিনের বদলে কাগজের ঠোঙায় পণ্য দেওয়া হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প কাপড় ও পাটের ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বাধ্য হয়ে সেসব ব্যাগ কিনছে কিংবা বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে আসছে। তবে নানা অজুহাতে রাজধানীর বৃহত্তম কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য কাঁচাবাজারে পলিথিনে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। বড় বাজারগুলোতে কিছুটা কম হলেও পাড়া-মহল্লায় অবাধে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন শপিং ব্যাগ। অনেক দোকান বিকল্প ব্যাগও রাখেনি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, রায়ের বাজার, হাতিরপুল বাজার, রায়সাহেব বাজারসহ বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকান, সবজি বিক্রেতা, মাছ-মাংসের বাজার, খাবারের হোটেলসহ সব স্থানেই ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। খুব কমসংখ্যক ক্রেতার হাতে পাটের বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ রয়েছে।