পাকিস্তানের করাচি থেকে কনটেইনার পণ্যবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে গত সোমবার। ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের জাহাজটি করাচি থেকে দুবাই হয়ে চট্টগ্রামে আসে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে নোঙর করা প্রথম কোনো জাহাজ এটি।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে কনটেইনারে থাকা পণ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করার কিছুই নেই। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে নৌপথে সরাসরি পণ্য পরিবহন যোগাযোগ শুরু হলো। বিষয়টি ইতিবাচক। সারা বছরই পাকিস্তান থেকে পণ্য আসে। তবে এতদিন তৃতীয় দেশ হয়ে আসতো। এখন সরাসরি আসায় আমদানিকারকদের খরচ কমবে। আগে দুই-তিন বন্দর হয়ে আসায় খরচ বেশি হতো।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে প্রতি সপ্তাহে কনটেইনার ভর্তি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আগে করাচি থেকে তৃতীয় কোনো দেশে আনা হতো। অর্থাৎ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলঙ্কায় কনটেইনার নামিয়ে রাখা হতো। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরগামী জাহাজের মাধ্যমে এখানে আনা হতো। এবার সরাসরি করাচি থেকে আসায় চট্টগ্রামের সঙ্গে নতুন নৌপথ চালু হলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবারের মতো করাচি থেকে কনটেইনার ভর্তি পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে জাহাজ আসার বিষয়টি ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। আগেও পাকিস্তান থেকে পণ্য আসতো। প্রতি সপ্তাহে পাকিস্তান থেকে পণ্য আসে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য আমদানি হয় দেশে। তবে এতদিন তৃতীয় কোনো দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আসতো। এখন থেকে সরাসরি আসবে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, কনটেইনার জাহাজটি দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে সোমবার (১১ নভেম্বর)। এদিন জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে খালাস করা হয়। এর মধ্যে করাচি বন্দর থেকে আনা হয় ২৯৭ কনটেইনার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয় ৭৩ একক কনটেইনার। ১২ নভেম্বর ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় জাহাজটি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আসা কনটেইনারে আছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।
কাস্টমসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী,শিপিং ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কনটেইনারে রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।
তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ, যা রয়েছে ১১৫ কনটেইনারে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট, যা এসেছে ৪৬ কনটেইনারে। এছাড়া ৩৫ কনটেইনারে চুনাপাথর এবং ছয় কনটেইনারে ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আমদানি করা হয়েছে।
এ ছাড়া কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, জাহাজটি কনটেইনারগুলো নামিয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে মঙ্গলবার। আমদানিকারকেরা এখন এসব পণ্য খালাসের জন্য কাস্টমস প্রক্রিয়া শুরু করার কথা।
শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও পেঁয়াজ আনা হয়েছে ৪২ একক কনটেইনারে। এসব কনটেইনারে পেঁয়াজ রয়েছে ৬১১ টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর পেঁয়াজ-আলু এনেছে।
সাধারণত ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করে ছাড়পত্র দেয় কাস্টমস। এরপরই আমদানিকারকেরা খালাস করে নেন।
পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিকারক খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে করাচি থেকে পণ্য প্রথমে শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরের বন্দরে এনে ফিডার জাহাজে চট্টগ্রামে পাঠানো হতো। তবে সরাসরি এই সেবা চালুর ফলে করাচি থেকে জাহাজে পণ্য বোঝাই করার পর আর কোনো মধ্যবর্তী বন্দরে কনটেইনার নামানোর প্রয়োজন হবে না, যা সময় এবং খরচ দুই-ই কমাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজ দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে ইন্দোনেশিয়ায় গেছে। আগামী এক সপ্তাহ অথবা ১০ দিন পর জাহাজটি পুনরায় চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে পৌঁছাবে। এখন থেকে এই রুটে পণ্য আনা-নেওয়া করবে। পাকিস্তানের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে এই জাহাজ সেবা চালু করেছে দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’। এটি প্রথমে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে আসবে। এরপর ভারতের মুন্দ্রা বন্দর, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। এটি নিয়মিত চলাচল করবে।