ঢাকা
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:২৮
logo
প্রকাশিত : নভেম্বর ২৪, ২০২৪

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে দেশে দেশে চিঠি দিচ্ছে সরকার

দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে চারটি দেশের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে ছয়টি গ্রুপের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। আরো ছয়টি গ্রুপের তথ্য চাওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে নিশ্চিত করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বর্তমান সরকারের শুরু থেকে সন্দেহজনক লেনদেন ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে দেড় হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করেছে সরকার।

পাশাপাশি পাচারকারীদের স্থানীয় সম্পদ জব্দের জোর চেষ্টা চলছে। দেশের অর্থ আত্মসাৎকারীদের স্থানীয় সম্পদ অধিগ্রহণ ও পাচার অর্থ পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চেয়ে যোগাযোগ করছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।

এদিকে সম্প্রতি এক সেমিনারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এর অন্যতম মাধ্যম ছিল বাণিজ্য। পাচার হওয়া এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ।

অর্থপাচার বন্ধে রাজনীতি, আমলাতন্ত্র ও ব্যবসাকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএফআইইউ সূত্র জানায়, পাচারের অর্থ ফেরাতে কঠোর অবস্থানে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএফআইইউ, এনবিআর এবং দুদক যৌথ প্রচেষ্টায় ৩৪৩ প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। তাদের অ্যাকাউন্টে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ২২৫টি তদন্ত রিপোর্ট সিআইডি এবং দুদকে পাঠানো হয়েছে।

এর মধ্যে ২০টির অডিট রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্তদের সবাই বিগত সরকারের আমলে অবৈধ সুবিধা নেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগির অন্যগুলোর অডিট সম্পন্ন করে দুদক ও সিআইডিতে পাঠানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএফআইইউয়ের একজন কর্মকর্তা।

সূত্র আরো জানায়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের সঙ্গে যুক্ত ১৭৭টি দেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউয়ের। আন্তর্জাতিক সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সব রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে পাচারকারীদের তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। জব্দ থাকা প্রভাবশালীদের ৩৪৩টি হিসাবের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এ ছাড়া আছে সামিট, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা, জেমকন, নাবিল গ্রুপ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদসহ সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হিসাব।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। এগমন্টের দেশগুলো, যাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, নতুন চুক্তি সম্পাদন করে ও ইন্টারপোলের সাহায্যে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এ টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এস আলম ও বেক্সিমকো, নাস ও সামিট গ্রুপসহ বড় বড় বেশ কিছু শিল্প গ্রুপের মালিকদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, যেসব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় সেই হিসাব থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কোনো লেনদেন করা যায় না। স্থগিত করা সব ব্যাংক হিসাবের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন—হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, লেনদেনের বিবরণী প্রভৃতি তথ্যসংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউয়ের কাছে পাঠায়।

এই ৩০ দিনের মধ্যে সংস্থাটি অর্থপাচারসংক্রান্ত লেনদেন বিশ্লেষণ করে। যদি ৩০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হয়, তাহলে তারা আরো ৩০ দিনের জন্য স্থগিতাদেশ বর্ধিত করতে পারে। এভাবে মোট সাতবার স্থগিতাদেশ বর্ধিত করার আইন রয়েছে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram