ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাস পরও সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারেননি। প্রশাসনিক অস্থিরতা এখনও অব্যাহত এবং বাজেট বাস্তবায়নে জড়িত বেশ কিছু কর্মকর্তা এখনও অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করছে না বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজস্ব খাতে চাপ পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর্থিক খাত সচল করা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। একদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ এবং অন্যদিকে চলমান ডলার সংকটের কারণে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের মাত্র ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এই হার গত ১৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর একই সময়ে এডিপির মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছিল। আইএমইডির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যেখানে অক্টোবর মাসে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৬৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার ছিল ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।
অর্থবিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এডিপি বাস্তবায়নের গতি কমে গেছে। এই অবস্থায় বাজেট বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনাটির মধ্যে রয়েছে প্রান্তিকভিত্তিক আয়-ব্যয় পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এবং বাজেট বাস্তবায়নে নতুন কৌশল গ্রহণ। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা ‘বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ’ শীর্ষক এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাজেট সংশোধনের জন্য নতুন নির্দেশনা
জারি করেছে অর্থবিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে মূল বাজেটে প্রদর্শিত ব্যয়ের মধ্যে সীমিত সংশোধন এবং উন্নয়ন বাজেট ও রাজস্ব আদায় কমিয়ে আনা। গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এই বাজেটের মোট ঘাটতি ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়।
সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে অর্থবিভাগ ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে অর্থবিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং বাজেটে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে পরিচালন বাজেটের সংশোধিত প্রাক্কলনগুলো অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগগুলোতে জমা দিতে বলা হয়েছে। ফলে সার্বিক দিক বিবেচনায় বাজেটকে কাটছাঁট করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা যায় এবং মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো সম্ভব হয়।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন গতবারের তুলনায় কম হয়েছে এবং বর্তমানে নতুন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের প্রয়োজন হচ্ছে।