ক্লাস এইট পাস করা মাদারীপুরের জয়নাল ঢাকায় এসে বড় চিকিৎসক বনে যান। রাজধানীর তিনটি হাসপাতালের চেম্বারে বসেন। নিজের নাম বদলে রেখেছেন ডা. আরিফ হাসান। রোগী দেখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থপেডিক্স সার্জন হিসেবেও। চিকিৎসক পরিচয়ে বিয়েও করেছেন পাঁচ বছর আগে।
রাজধানীর মাতুয়াইলের ফেইথ হাসপাতালে রোগী দেখছেন বিএসএমএমইউর অর্থপেডিক সার্জন ডা. আরিফ হাসান। তার বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন নম্বর–৮১৩৮৩। অপারেশন প্রয়োজন নেই জানিয়ে রোগীকে দিলেন প্রেসক্রিপশন।
কিছুক্ষণ পরে তার চেম্বারে এলেন আরেক ব্যক্তি। তার নামও ডা. আরিফ হাসান। তারও বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন নম্বর–৮১৩৮৩।
এবার দুই আরিফ হাসান পাশাপাশি। বিএমডিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন নম্বরের সঙ্গে পরের ব্যক্তির চেহারা মিলে গেল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে প্রথম ব্যাক্তি স্বীকার করলেন তিনি আসল আরিফ হাসান নন।
পরে তিনি এমবিবিএস পাস করেছেন কি না, এমন সন্দেহ থেকে তাকে এমবিবিএসের পূর্ণরূপ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন তার আসল নাম ডা. আরিফ হাসান জয়নাল।
তিনি এইচএসসি পাস। তবে দাবির পক্ষে তিনি নিজের জাতীয় পরিচয় পত্র, সনদপত্র বা অন্য কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডা. আরিফ হাসান নামে মাতুয়াইলের ওই হাসপাতালে চেম্বার করা ব্যক্তির প্রকৃত নাম জয়নাল আবেদীন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা জয়নাল যাত্রাবাড়ীর তিনটি হাসপাতালে রোগী দেখতেন ডা. আরিফ হাসান পরিচয়ে।
এনাম মেডিকেলের চিকিৎসক আরিফ হাসানের নাম ও বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে ডাক্তার সেজেছিলেন জয়নাল। তার ভুল প্রেসক্রিপশনের কারণে সম্প্রতি প্রশ্নের মুখে পড়েন ডা. আরিফ।
আসল ডা. আরিফ হাসান বলেন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ট্রলি বয় না ওয়ার্ড বয় নাকি ঝাড়ুদার ছিল, এটা সে নিজেই ভালো জানে। সে এখন একজন এমবিবিএস আবার এমএস। অর্থাৎ অর্থপেডিকের সবচেয়ে বড় একটা ডিগ্রি লিখে সে এখানে রোগী দেখছে। আমার কাছে তথ্য আছে, সে অপারেশনও করে।
এদিকে জয়নালের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি ফেইথ হাসপাতাল। এই ভুয়া ডাক্তার দিয়েই তিন বছর ধরে রোগী দেখানো হচ্ছে।
ফেইথ হাসপাতালের পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, উনি শনির আখড়ার কয়েকটা হাসপাতালে চেম্বার করতেন। ওই বিশ্বাসে প্রথমে নিয়েছি। ভোটার আইডি কার্ড, বিএমডিসি সব উনি সেইম টু সেইম দেখিয়েছেন। আমরাও চেক করেছি, কিন্তু চেহারার সাথে মিল পেলাম না। তখন স্যারকে তো আমরা দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করতে পারি না।
পাঁচ বছর আগে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসক পরিচয়ে বিয়ে করেছেন জয়নাল আবেদীন। তার স্ত্রীও জানেন না আসল নাম।
তার শ্বশুর মনির হোসেন বলেন, ওনার কাছে ডাক্তার পরিচয়ে মেয়ে বিয়ে দিসি। উনি পিজিতে পড়ালেখা করতেসে। ওখান থেকে ডাক্তার হয়ে বের হবে। এই হিসেবেই আরকি মেয়ে বিয়ে দিসি।
এদিকে মাতুয়াইলের ফেইথ হাসপাতালের ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে এসে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জয়নালকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ডেমরা থানার পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ভুল স্বীকার করে জয়নাল বলেন, আমি আর এ ধরনের কাজ করবো না।