সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। বিক্রির চেয়ে গ্রাহকরা ভাঙ্গাচ্ছেন বেশি। ফলে এ খাত থেকে প্রত্যাশিত ঋণ পাচ্ছে না সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানো প্রয়োজন বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
সুদের চাপ কমাতে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ মুনাফা প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ থেকে ১০ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে উৎসেকর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক এবং সঞ্চয়পত্র কেনা-বেচায় সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, গেল এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুই ছুই। ব্যাংকের সুদ বাজারভিত্তিক করে দেয়ায় কোন কোন ব্যাংক আমানতে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ডেও ১২ থেকে প্রায় ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে।
ফলে গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও পরে কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা করা হয়।
তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের গেল মে পর্যন্ত হিসাব বলছে, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। বিক্রির চেয়ে ভাঙ্গানো হয়েছে বেশি। গ্রাহকরা বলছেন, ব্যাংক ও বন্ডের সাথে সমন্বয় করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কিছুটা বাড়ানো দরকার।
গ্রাহকরা জানান, ব্যাংকে অনেক সময় নিরাপত্তা মনে করি না সেজন্য সঞ্চয়পত্র রাখি। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের রেসিওটা রিভিউ করা দরকার। অনেক কঠিন অবস্থা, দ্রব্যমূল্যের যে দাম। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্রের রেট যদি দিনের পর দিন এভাবে কমতে থাকে তাহলে দেখা যাবে জমা দেওয়ার সঞ্চয়পত্র আর থাকবেনা, ভেঙে খেয়ে ফেলতে হবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষামাত্রা আছে সরকারের। কিন্তু সুদের হার না বাড়ালে লক্ষ্য পূরণ কঠিন বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, “লভ্যাংশ যদি কম পাওয়া যায় তাহলে তো মানুষ যাবেনা। সেক্ষেত্রে সমন্বয় করা উচিত। ব্যাংক এবং বাজারের সঙ্গে এটার সমন্বয় হওয়া প্রয়োজন।”
সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার প্রয়োজনীয় ঋণ না পেলে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আরও বেশি চাপ পড়বে, ঋণ প্রবাহ কমবে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে, বলছেন অর্থনীতিবিদরা।