দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রটি প্রণয়নের জন্য দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি করা যেতে পারে।
শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য গঠিত এই কমিটিকে অভিহিত করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি’।
প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন এবং এলডিসি থেকে উত্তরণে করণীয় বিষয়েও পরামর্শ থাকবে।
এই কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটিতে প্রয়োজনীয় সদস্যদের মনোনীত করবেন। কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে।
জানানো হয়, কমিটির সদস্যরা অবৈতনিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা প্রস্তাবিত কমিটির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরনের সহযোগিতা করবে।
প্রস্তাবিত এই শ্বেতপত্রে মূলত ছয়টি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, এর মধ্যে রয়েছে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা, বাহ্যিক ভারসাম্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বেসরকারি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গত দেড় দশকে দেশের অর্থনীতি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জে পড়েছে। বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।
অর্থ বিভাগের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পতনের আগে শেখ হাসিনার সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি, তা বাংলাদেশের তিনটি বাজেটের মোট বরাদ্দের সমান। অন্যদিকে বাজেট–ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কর আদায়ের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির চেষ্টা না করে দেশি-বিদেশি ঋণের প্রতি ঝুঁকেছিল সেই সরকার।
শ্বেতপত্র প্রণয়নের প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, বিগত সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নজিরবিহীন নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত করতে এই সরকারের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অর্থনীতি পুনরায় সচল করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
এ ছাড়া নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দূর, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরানো, কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র থাকা প্রয়োজন।