সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে ব্যাহত হচ্ছে বাস চলাচল। বাস ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাঁদের। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, রাজধানী ও আশপাশের শহরতলি মিলিয়ে দিনে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস সড়কে চলাচল করে। এর মধ্যে কয়েক দিনের আন্দোলনে চার হাজারের মতো বাসের দিনে চলাচল বন্ধ ছিল।
বাকি বাসগুলো পথে আটকে থাকায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ট্রিপ সংখ্যা কমেছে। সমিতির দাবি, বাস না চলায় দিনে প্রতিটি বাসের অন্তত পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে দিনে চার হাজার বাসে ক্ষতি দুই কোটি টাকা। পাঁচ দিনে ক্ষতি ১০ কোটি টাকা।
গত ২ জুলাই শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সূচনা হয়। পরের দুই দিন, অর্থাৎ ৪ জুলাই পর্যন্ত বিকেলের দিকে শুধু শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয়। এতেও পরীবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কাটাবন, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান ও কাকরাইল এলাকায় এর প্রভাব পড়ে।
যান চলাচলে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা অচলাবস্থা তৈরি হয়। দুপুরের পর বাসের ট্রিপ কমে যায়। তিন ট্রিপের জায়গায় একটি ট্রিপ চালাতে পেরেছেন বাসচালকরা।
গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ ঘোষণা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। গত ১১ জুলাই পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান ছিল।
এর মধ্যে বাস চলাচল দিনের বেলা অনেকটা বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পরও সড়কে তুলনামূলক বাস কম দেখা গেছে।
পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘এই আন্দোলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করলে তাঁদের কী ক্ষতি। রাস্তা দখল করে জনভোগান্তি তৈরি না করলে কি আন্দোলন সফল হবে না? সবাই শুধু বাসের দোষ দেখে, বাস মালিকদের খারাপ দিন দেখে না। আমাদের ব্যাংকের ঋণের সুদ তো থেমে নেই, সেই টাকা কে দেবে?’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ‘মালিকের চেয়ে শ্রমিকের ক্ষতি বেশি। মালিকরা চালকের কাছে দৈনিক জমায় বাস ভাড়া দিয়ে দেন। সেই টাকা চালককেই দিতে হয়। এখন একটা বাস পাঁচ ঘণ্টা সিগন্যালে বসে থাকলে মালিকের কিছু যায়-আসে না। ক্ষতি যা হওয়ার চালকের হয়।’
এই শ্রমিক নেতা জানান, ‘চালক ও পরিবহন শ্রমিক মিলিয়ে ১৭-১৮ লাখ মানুষ রয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের অন্তত দিনে এক হাজার টাকা করে হলেও ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি কে পোষাবে? ঋণ করে চালকরা মালিকের টাকা পরিশোধ করছেন।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের হিসাব অনুযায়ী, দিনে যদি আট ঘণ্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়, তাহলে গড়ে প্রতি কর্মঘণ্টার জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। সে হিসাবে পাঁচ দিনে আট ঘণ্টা করে ধরলে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এই হিসাব চূড়ান্ত নয়। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছু যুক্ত করার সুযোগ আছে। সঠিক সংখ্যার জন্য প্রতিটি খাত আলাদা করে হিসাব করা প্রয়োজন।