সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী। এখন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ৫ জুন ছয় জনের দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি করেন হাইকোর্ট এবং কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। ৯ জুন রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। ১০ জুলাই কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেয় আপিল বিভাগ।
তবে এই কোটাব্যবস্থা বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের কোটা ও ২০১২ সালে প্রতিবন্ধী কোটা যুক্ত করা হয়েছিল।
সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এবং কোটা বণ্টনের বিষয়ে ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার আদেশ জারি করে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে জেলা কোটায় নিয়োগ হতো। এই ৮০ শতাংশ জেলা কোটার মধ্য থেকেই ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ কোটা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল।
১৯৭৬ সালে প্রথম বারের মতো কোটা বণ্টনে পরিবর্তন আনা হয়। তবে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। এছাড়া ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারী এবং বাকি ১০ শতাংশ জেলার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
১৯৮৫ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের কোটায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ সময় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা ও ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। ১৯৯০ সালে নন-গেজেটেড পদগুলোর নিয়োগে কোটা পদ্ধতিতে আংশিক পরিবর্তন আনা হলেও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে তা অপরিবর্তিত থাকে।
১৯৯৭ সালে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উপযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থী পাওয়া না গেলে মুক্তিযোদ্ধা/শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যার জন্য তা বরাদ্দের আদেশ জারি হয়।
এভাবে বিভিন্ন সময়ে কোটায় পরিবর্তন এসেছে। এভাবে কোটাব্যবস্থা সংস্কার উচিত বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কোটার বিষয়টি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন সময় অনগ্রর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোটাব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আমিও মনে করি, এখনো কোটার একটি যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন। আদালতের রায়েও বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা চাইছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সবার চাওয়া একটি বিন্দুতে আছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সংস্কার করার পক্ষে মত দেন এই শিক্ষাবিদ।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমানও একই মত দিয়ে বলেন, আমি মনে করি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোটার সংস্কার প্রয়োজন আছে। ৫৬ শতাংশ কোটা হওয়া উচিত নয়। এটা বেশি হয়ে গেছে। আমার ব্যক্তিগত মত কোটা সংস্কার করে এটি ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। এতে ৮০ শতাংশ মেধাবীদের সুযোগ তৈরি হবে।