কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা ও সংকট শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনের জন্য বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটিতে শুনানিতে তিনি এ কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে শুনানিতে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি উঠে আসে।
প্রতিনিধিসভায় ম্যাসাচুসেটসের নাইনথ ডিস্ট্রিক্টের সদস্য বিল কিটিং বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনকে ঘিরে হতাহত ও গ্রেপ্তারের খবরাখবর তুলে ধরে জানতে চান, আসলে এখানে কী হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে?
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি। আমরা সরকারকে জমায়েতের ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান জানাতে বলেছি। আমরা ইন্টারনেটসেবা চালু করতে বলেছি।
’
বাংলাদেশে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কারফিউ জারি ও নাশকতাকারীদের গুলি করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার কথাও জানান ডোনাল্ড লু। তিনি বলেন, গুলির নির্দেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের মাধ্যমে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
লু বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এটি অত্যন্ত উত্তেজনাকর একটি সময়। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি শান্ত হবে।
বাংলাদেশে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। এই সংকটের শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানে উৎসাহিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
শুনানিতে লু বলেন, বাংলাদেশে গত নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তিবিশেষের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই বিশেষ ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে আগের দুই নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে সহিংসতা কম হয়েছে।
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে ওই নিষেধাজ্ঞা সহায়ক হবে কি না জানতে চান মার্কিন প্রতিনিধিসভার একজন সদস্য।
জবাবে লু বলেন, ওই নিষেধাজ্ঞা ছিল নির্বাচনী সহিংসতা ও নির্বাচনী অনিয়মের বিষয়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা মার্কিন প্রশাসনকে দিয়েছে। সেগুলো লোকজন, বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক নিখোঁজ (গুম) হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
শুনানিতে উঠে আসে, চীন বা রাশিয়া নয়, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের বিষয়ে তার নীতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনা করে থাকে। বাংলাদেশে চীনের প্রভাব আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ আছে। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে বেশ সতর্ক।
শুনানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক দপ্তর ইউএসএআইডির এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর বাংলাদেশে গণতন্ত্র, নাগরিক সমাজের সুরক্ষা, শ্রম খাতের সংস্কার, মানবাধিকার রক্ষা এবং বাংলাদেশকে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও স্থিতিস্থাপক অংশীদার হয়ে উঠতে সহযোগিতার জন্য মার্কিন বাজেটে অর্থ বরাদ্দের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি লু বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়।