কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে ব্যাপক সহিংসতার পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি পুড়েছে, অনেক পুলিশ সদস্য আহত-নিহত হয়েছেন। ফলে এখনো অনেকটা আতঙ্কে আছে পুলিশ বাহিনী।
তাই পুলিশ পূর্ণরূপে ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে।’পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, হামলা ও নাশকতায় দেশের পাঁচ শতাধিক থানার কার্যক্রমে এখনো কোনো গতি আসেনি। ফলে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ না থাকায় সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। তবে সেনাবাহিনী সার্বিক শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশকে সহযোগিতা করছে।
এ অবস্থায় পুলিশকে নতুন নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সারা দেশের থানাগুলোতে মামলা, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও এফআইআর দ্রুত নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্তে বিলম্ব না করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
লুট হওয়া ১৮১৪ অস্ত্র, ৯০ হাজার গুলি-টিয়ার শেল উদ্ধার
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সারা দেশে বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ লুট করে নেয় উচ্ছৃঙ্খল জনতা। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ এখনো উদ্ধার হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, লুট হওয়া এক হাজার ৮১৪টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৭ হাজার ৪০ রাউন্ড গুলি, দুই হাজার ৬৪৭টি টিয়ার শেল এবং ২৯২টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার চলছে। কারো কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকলে নিকটবর্তী থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
থানার কার্যক্রম চলছে ঢিমে তালে
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানায় পুলিশি কর্মকাণ্ড শুরু হলেও এখনো সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল মিরপুর, ভাটারাসহ আরো কয়েকটি থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানার পরিবেশ এখনো স্বাভাবিক করা যায়নি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য যেসব সরঞ্জাম দরকার তার জোগান এখনো দেওয়া হয়নি। এখন শুধু জিডি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এর বাইরে কিছু মামলা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর তাঁর ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা এবং আওয়ামী লীগের জোটের শরিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যা মামলা হচ্ছে। থানায় এখন যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা শুধু এই মামলা নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
তবে মাঠ পর্যায়ের যেসব অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটছে সেদিকে তাঁরা খুব একটা নজর দিতে সময় পাচ্ছেন না। আবার থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না থাকার কারণেও পুলিশ সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালনে ভয়ের মধ্যে আছেন বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।