জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া দিয়ে ফের অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এতে জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুপ্রবেশের সময় কিছুটা প্রতিহত করা গেলেও অনুপ্রবেশকারীদের বিশাল অংশ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। তাদের মধ্য মামলার পরোয়ানাভুক্ত অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগ আশ্রয় নিচ্ছেন উখিয়া টেকনাফসহ অন্যান্য শিবিরে।
অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে রীতিমতো ভাবতে হচ্ছে অভিযান পরিচালনাকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। অস্ত্রধারী অনুপ্রবেশকারীরা একসময় টেকনাফ ও উখিয়ার গড়ে তুলেছিল অপহরণ কারবার।
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউপি সদস্য আলতাজ হোসেন বলেন, মায়ানমারে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের একটি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের ওপারে মায়ানমারে থাকতো। গত ৩১ আগস্ট নবী হোসেন ও তার ভাই ভুলুকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। শুধু দুইটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া গেছে কিন্তু আরও শতাধিক তার গ্রুপ সদস্যদের অস্ত্র রয়েছে। এগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করতে পারেনি। যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অভিযান পরিচালনা করে তাহলে এগুলো উদ্ধার করা সম্ভব। নাইলে আবার উখিয়া টেকনাফ অনিরাপদ হয়ে যাবে।
মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা একজন রোহিঙ্গা বলেন, ২০১৭ সালে মায়ানমার বাহিনীর নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল এবং তারা এখানে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছিল। যখন তাদের ধরতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা সবসময় অভিযান চালিয়েছে। তখন তারা গ্রেপ্তার এড়াতে মায়ানমারে চলে গিয়েছিল। বর্তমান মায়ানমারে সংঘর্ষে কারণে তারা এপারের আশ্রয় নিয়েছেন। এই গোষ্ঠীর অন্তত ৮০ থেকে ১০০ জন অস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে গেছে। শোনা যাচ্ছে তারা নতুন করে আস্তানা তৈরি করবে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারাবাহিক অভিযানে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মায়ানমারে পালিয়েছিল। মায়ানমারে চলমান সংঘাত ও সীমান্তে অস্থিরতার সুযোগে তারা আবার এপারে ঢুকে পড়েছেন। নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, আলিকিন, আরসাসহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন জায়গায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গারা ও আতঙ্কিত।
এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া এবং নাইক্ষ্যংছড়ি স্থল ও জলসীমা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। গেল কিছুদিন আগে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা।
জনপ্রতিনিধিরা জানান, নৌকায় করে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের অনেকেই কৌশলে ক্যাম্পে প্রবেশ করেছেন। তবে বিজিবির সদস্যরা দুই শতাধিক রোহিঙ্গা আটক করেছিলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শাহপরীর দ্বীপ মোহনায় টহল এবং নজরদারি জোরদার করেছে কোস্ট গার্ড। এছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের স্থল সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, সীমান্ত দিয়ে কীভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে এ বিষয়ে বিজিবি আছে। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করার বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত নয়। আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে। যদি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমরা তথ্য পাই অভিযান চালিয়ে থাকি। এছাড়া সন্ত্রাসীসহ ক্যাম্পে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য এপিবিএন সজাগ রয়েছে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী যদি প্রবেশ করে তাদের চিহ্নিত করে আইডি কার্ড মিলিয়ে দেখবে এপিবিএন। যদি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনসহ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উখিয়া টেকনাফ কোন ভাড়া বাসায় যদি রোহিঙ্গা থাকে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।