ঢাকা
২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:৫১
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

বন্যাকবলিত এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকটে গবাদি পশু

লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার চর কাদেরিয়া ইউনিয়ন। চারপাশে থৈ থৈ পানি। বসতভিটা ছেড়ে ইউনিয়নটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে হাজারো মানুষের ভিড়। একই সঙ্গে রয়েছে গবাদি পশু। প্রায় তিন সপ্তাহ পানিবন্দি থাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। বাড়ছে পশুর রোগ-বালাই।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে চর কাদিরার কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মানুষের পাশাপাশি অবলা প্রাণীর কষ্ট।

এই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন হইছে চারটা গরু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। নিজের পরিবারসহ আমিও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকি। নিজেরা কোনো রকম খাবার পেলেও গরুর জন্য কোনো খাদ্য পাচ্ছি না। চারপাশ ডুবে যাওয়ায় ঘাস-লতাপাতা নেই। বন্যায় গরুর খড়ও নষ্ট হয়ে গেছে। গরুগুলো দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

একই গ্রামের মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে আমার দুটি গরু আছে। আমার ঘর থেকে পানি নামলেও গোয়ালঘর থেকে পানি নামেনি। এই আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০০টি গরুর জন্য আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে একবার গত সপ্তাহে এক বস্তা ভুসি দিলেও সেগুলো দুদিন পর শেষ। এলাকায় কোথাও ঘাস নেই। কিছু গরু অসুস্থ, সরকারিভাবে কোনো ডাক্তার-কবিরাজ আসছে না।’

ঘরে হাঁটুসমান পানি আসার পর সবাই একসঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। সঙ্গে কিছু ভুসি আর খৈল ছিল। দুদিন খাওয়ানোর পর সেগুলো শেষ। এখন চারপাশে হাহাকার। গত কয়েকদিন রাস্তার পাশে বেঁধে রাখছি, এখন সেই ঘাসও শেষ।-ভুক্তভোগী

একই সুরে কথা বলেন জেলার রায়পুর উপজেলার চর কাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ। সেখানে গত ২৫ আগস্ট দুটি গরু ও একটি ছাগল নিয়ে এসেছেন রিতা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ঘরে হাঁটুসমান পানি আসার পর সবাই একসঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। সঙ্গে কিছু ভুসি আর খৈল ছিল। দুদিন খাওয়ানোর পর সেগুলো শেষ। এখন চারপাশে হাহাকার। গত কয়েকদিন রাস্তার পাশে বেঁধে রাখছি, এখন সেই ঘাসও শেষ। কোনো উপায় পাচ্ছি না। সহযোগিতা পেলে গরুগুলোর জান বাঁচতো।’

স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় লক্ষ্মীপুর জেলার ৯০ শতাংশ এলাকাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখে। অনেক কৃষিজীবী মানুষ নিজেদের সঙ্গে পোষা প্রাণীদেরও নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

কমলনগর উপজেলায় ত্রাণ বিতরণে সহযোগিতা করা উদ্দীপ্ত তরুণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফজলে রাব্বি বলেন, ‘পানিবন্দি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। অবলা পশু-পাখির খাবারের সব সূত্র শেষ। মানুষ তো পশু-পাখির জন্য ত্রাণ নিয়ে আসে না। পানি নামছে প্রতিদিন এক থেকে দুই ইঞ্চি। আবার ভারী বৃষ্টি হলে এক ফুট বেড়ে যায়। প্রশাসন যদি খাবারের ব্যবস্থা না করে মানুষ উপার্জনের হাতিয়ার এসব গবাদি পশু হারাবে।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, ‘যেখানে খাদ্য প্রয়োজন ১০ কেজি, সেখানে দেওয়া যাচ্ছে এক কেজি। গতকাল রামগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় দিয়েছি। আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে সাহায্য চেয়েছি। তবে যারা পশু-পাখি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমি লিস্ট করে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।’

যেখানে খাদ্য প্রয়োজন ১০ কেজি, সেখানে দেওয়া যাচ্ছে এক কেজি। গতকাল রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। আমরা বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে সাহায্য চেয়েছি। তবে যারা পশু-পাখি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আমি লিস্ট করে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. কুমুদ রঞ্জন মিত্র

স্থানীয়দের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর বন্যার সম্মুখীন হয় খুবই কম। এ এলাকার খাল-বিল নদী দখলের কারণে পানি নামছে না।

কমলনগর উপজেলার স্থানীয় স্কুলশিক্ষক ও নদী আন্দোলন কর্মী সানাউল্লাহ সানু বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের পূর্বপাশের ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়কের পাশ দিয়ে মুছার খালের এক মাথা গেছে ওয়াপদা খালে, অন্য মাথা মেঘনায়। প্রায় একশ ফুট চওড়া খালটির ওপর চর মনসা এলাকায় আশপাশের কয়েকটি ইটভাটা বড় বড় রাস্তা তৈরি করে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে খাল। ফলে পূর্বপাড়ের কয়েক হাজার একর জমিতে ফসল ডুবে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে একশ’র বেশি খাল রয়েছে। প্রতিটি খাল দখলে। এছাড়া ভুলুয়া মেঘনা নদীতে দখল থাকায় পানি নামছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ও পশু-পাখি। দ্রুত যদি পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও খালের পানি নামার ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে জনজীবন বিপন্ন হতে পারে।’

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram