ঢাকা
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৪২
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারামুক্তির হিড়িক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কারামুক্তির হিড়িক পড়ে গেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ছয়জন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। খুন, চাঁদাবাজি, ভাংচুর ও দখলবাজির অভিযোগে এদের প্রায় সবারই বিরুদ্ধে ৭ টি থেকে ১৫ টি মামলা রয়েছে।

তাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। এখনও কারাগারে আছেন এমন সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ মুক্তির জন্য জোর তদবির করছেন। তারাও বের হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।

আদানির বকেয়া নিয়ে চাপে বাংলাদেশ
এতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হতে পারে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগে তারা আবার বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন বলে সচেতন নগরবাসীর আশঙ্কা। তারা বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা জামিনে মুক্ত হলে এই অপরাধের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সরকার ঘোষিত বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে বড় অংশই এখন দেশের বাইরে। মারা গেছেন কেউ কেউ। তাদের বাইরে যারা কারাগারে আছেন, তাদের বেশির ভাগই দু-একটি মামলা ছাড়া অন্যগুলোয় খালাস পেয়ে কিংবা জামিন নিয়ে কারাগারে অবস্থান করছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন তারা জামিনে বের হয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাতায় ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

এর মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পূর্ব রাজা বাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। এর আগে ১৪ আগস্ট ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ইমন মুক্তি পান। একই সময়ে ইমনের প্রধান সহযোগী মামুনও জামিনে মুক্তি পান। ১৩ আগষ্ট কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে জামিনে মুক্তি পান আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস। এরও আগে ১২ আগস্ট একই কারাগার থেকে মুক্তি পান ফ্রিডম রাসু ও পিচ্চি হেলাল, টিটন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে,২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রকাশ করে। তাতে আব্বাস, হেলাল, টিটন ও রাসুর নাম ছিল। এই চারজনসহ জামিনে বের হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ অনেক মামলা রয়েছে। কোনো কোনো মামলায় তাদের সাজাও হয়। আবার কোনো কোনো মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতিও পান কেউ কেউ। সুইডেন আসলামসহ কয়েকজনের ক্ষেত্রে অব্যাহতি পাওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল না করার ঘটনাও রয়েছে। বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করত। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসছেন। আবার বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই।

ঢাকার অপরাধ জগত নিয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক সূত্র জানায়, জামিনে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। মিরপুর এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাগার থেকে বের হয়ে নেপালে পাড়ি জমিয়েছেন এমন গুঞ্জনও রয়েছে। কেউ আবার পুরোনো রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আশায় আছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকের সঙ্গে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কারও কারও সখ্যতা হয়েছে। সেই সুযোগও কেউ কেউ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই বাইরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাই জামিনে মুক্ত হলে তাদের অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীরা আবার পুরোনো অপরাধের নেটওয়ার্ক সচল করছেন কি না, সে বিষয়ে কঠোর নজদারি করা প্রয়োজন। তা না হলে ছাত্র–জনতার নতুন বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি নষ্ট হবে।

শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে জামিন পাচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায়। এ কারণে কারাগারে থাকা অবস্থায় কিংবা জামিনের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দিকে আলাদাভাবে নজর দেয়া সম্ভব হয়নি। সেই সুযোগে তারা এভাবে বের হতে পারছে।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, জামিনে বের হয়ে কেউ যেন নতুন করে অপরাধমূলক কাজে জড়াতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী, গডফাদার বা যেকোনো পরিচয়েই হোক, অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জামিনে মুক্তি পেয়ে লাপাত্তা হন। এরপর থেকে বিকাশ ফেরারী আসামি হয়ে ভারতে আত্মগোপন করেছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এই তালিকায় চার নম্বর তালিকাভূক্ত আসামি ছিলেন তানভীরুল ইসলাম জয়। ২০০৪ সালে তিনি পালিয়ে আমেরিকায় আত্মগোপন করেন। বছর চারেক আগে তিনি মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় চলতি বছরে ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় কারাবন্দী রয়েছেন মগবাজারে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান, মোহাম্মদপুরের কামাল পাশা ও খিলগাঁওয়ের ফ্রিডম সোহেল।

সূত্র প্রথম আলো, ইত্তেফাক

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram